শিরোনাম
॥ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ॥
হবিগঞ্জ, ৭ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস) : সন্তান জন্মের মাত্র চার মাস পরই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন হবিগঞ্জের রিপন চন্দ্র শীল । তার শিশু সন্তান স্বাধীনের উৎসুক চোখ খোঁজে বাবাকে। বাবার বয়সী কাউকে দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এক মাত্র সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রিপন শীলের বিধবা স্ত্রী তুষ্টি রাণী শীল।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের রতন চন্দ্র শীল ও রুবী রাণী শীল দম্পতির পুত্র রিপন শীল(২২)। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। পেশায় নরসুন্দর রিপন স্থানীয় যুবদল কর্মী ছিলেন।
শহিদ রিপন শীলের মা রুবী রাণী শীল বাসসকে জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট দুপুরে রিপন শীল তার মাকে বলেন, আমি তো লেখাপড়া করতে পারছি না। তবে ছাত্র আন্দোলন যৌক্তিক। তাই আমি তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে যাচ্ছি। এ কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। ফিরেছে লাশ হয়ে। এদিন দুপুরে হবিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ এর সাথে বিএনপির সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন রিপন শীল।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি ছেলের আন্দোলনে যাওয়ার খবর শুনেই খোঁজাখুঁজি করি। সে সময় হঠাৎ একটি ফোন আসে যে আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমি হাসপাতালে ছুটে গিয়ে আমার ছেলেকে জীবিত পাইনি। আমার ছেলের মৃত্যুতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
অল্প বয়সে স্বামী মারা যাওয়ার পর মা রুবী রাণী শীল দুই ছেলেকে নিয়ে শহরের একটি কলোনীতে বসবাস শুরু করেন। রিপন শীলের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করার কিন্তু অভাবের সংসারে আর হয়ে উঠেনি। রিপন শীলের আয়েই কোনোরকমে সংসার চলতো তাদের। এখন সেটিও বন্ধ। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে তার পুত্র হত্যার বিচার চান এবং তার পরিবারকে পুনর্বাসন করার দাবি জানান।
এদিকে নিহত রিপন শীলের ৬ মাস বয়সী পুত্র স্বাধীনের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একমাত্র শিশু সন্তান নিয়ে দিশেহারা তার বিধবা স্ত্রী তুষ্টি রাণী শীল (১৮)। স্বামী হারানোর বেদনা, শিশু সন্তানের ভবিষ্যত এবং নিজের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
রিপন শীলের স্ত্রী তুষ্টি রাণী শীল জানান, আমি অল্প বয়সে বিধবা হয়েছি। আমার ৬ মাসের ছেলে রয়েছে। ছেলের নাম ছিল আবির বিশ্বাস কিন্তু স্বামী শহিদ হওয়ার পর ছেলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘একা একা কিভাবে ছোট ছেলেকে মানুষ করবো। কে নেবে আমার ছেলের দায়িত্ব।’
শহিদ রিপনের ছোট ভাই শিপন শীল বলেন, আমরা দুই ভাই একসাথে আন্দোলনে গিয়েছিলাম। হঠাৎ শুনতে পাই বড়ভাই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমারও পায়ে গুলি লাগে। বিকেল বেলায় শুনি ভাই মারা গেছে। আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছি। কিন্তু আমরা দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে আমার ভাইকে হারিয়েছি। আমি আমার ছোট ভাতিজার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
পরিবার সুত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কাছ থেকে তারা অনুদান পেয়েছেন। তবে শহিদ রিপনের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন।