বাসস
  ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:২২
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:২৭

সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন ছিল শহিদ আকিনুরের

॥ মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ॥


হবিগঞ্জ, ১২ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস): বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ আকিনুর মিয়ার স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা ছিল ‘আমি আন্দোলনে যাচ্ছি, যদি না ফিরি তাহলে আমার সন্তানদের তুমি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করো।’


আন্দোলনে গিয়ে আর জীবিত ফেরেননি আকিনুর। লাশ হয়ে ফিরেছেন তিনি। তবে এখন সন্তানদের কিভাবে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন এবং কে এর ব্যয়ভার বহন করবে সেই চিন্তায় দিশেহারা তার স্ত্রী রাকিয়া আক্তার।


নিহত আকিনুর মিয়া(৩৫) জেলার বানিয়াচং উপজেলার কামালখানী মহল্লার বন্দেরবাড়ি এলাকার তাহের মিয়ার ছেলে। মা মিনারা খাতুন। আকিনুরের দুই কন্যা রাবিয়া, সামিহা ও ছেলে আব্দুল্লাহ। বড় মেয়ের বয়স ৯ ও ৫ বছর আর ছেলের বয়স ২ বছর।  


গত ৫ আগস্ট বানিয়াচংয়ে বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আকিনুর। পরে বানিয়াচং হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।


আকিনুরের স্ত্রী রাকিয়া আক্তার বাসসকে জানান, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই আকিনুর সক্রিয় ছিল। গত ৫ আগস্ট দুপুরে যাওয়ার সময়ে বলেছিলেন, ‘আমি আন্দোলনে যাচ্ছি। আজ একটি ফয়সালা হবে। যদি আমি জীবিত না ফিরে আসি তাহলে আমার সন্তানদের তুমি দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করো।’


স্বামীর স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাকিয়া খাতুন। কিন্তু রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। বিভিন্ন জনের সাহায্যে সন্তানদের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু নিয়মিতভাবে তাদের পড়ালেখার ব্যয় কিভাবে চলবে তা নিয়ে রয়েছে দুশ্চিন্তা। এছাড়া রয়েছে সংসারের খরচ। স্বামী আকিনুরই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপাজর্নকারী ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে একেবারে অসহায় রাকিয়া খাতুন ভেঙে পড়েছেন। তিনি তার পরিবার চালানো ও সন্তানদের স্বামীর কথা মতো দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।  


এদিকে স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে রাকিয়া খাতুন বলেন, আমি অবশ্যই এ হত্যাকা-ের বিচার চাই। প্রকৃত আসামীরা শাস্তি পেলে ভীষণ খুশি হবো।


স্থানীয়রা জানান, আকিনুর আন্দোলনের শুরু থেকেই ভীষণ সক্রিয় ছিলেন। দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে একেবারে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। নিজেই কেবল আন্দোলনে অংশ নিতেন না সকলে যেন হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামে তাতেও উৎসাহ যোগাতেন।  বেশ জোরেসোরে আওয়াজ তুলতেন তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে।


তারা আরো  জানান, প্রতিদিনই আন্দোলনে অংশ নিতেন আকিনুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা তিনি দেখে যেতে পারেন নি। ছোট ছোট সন্তান রেখে তিনি দেশের জন্যে জীবন দিয়েছেন। শহিদ হয়েছেন।


তারা বলেন, আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিও আহ্বান জানাই।