বাসস
  ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৫

শরীরে রাবার বুলেটের যন্ত্রণা আর সংসারের চিন্তায় দিশেহারা দিনমজুর এনামুল

॥ শফিকুল ইসলাম বেবু ॥

কুড়িগ্রাম, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস): ঘরে খাবার নেই, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিঁধে আছে ১৩ টি রাবার বুলেট। শারীরিক যন্ত্রণা আর অর্থ চিন্তায় দিশেহারা দিনমজুর মোঃ এনামুল হক (২৫)।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট জেলার ভুরুঙ্গামারীতে ছাত্রদের সাথে মিছিলে অংশ নেন এনামুল। ছাত্রলীগের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে বুলেটবিদ্ধ হন তিনি। মাথাসহ সারা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৫০ টি রাবার বুলেট বিঁধে যায়। কয়েকবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেশিরভাগ বুলেট বের করা হলেও এখনো মাথার ভেতরে বিঁধে আছে ৭ টি বুলেট, হাতে ১ টি  এবং উরুতে ৫ টি। শরীরিক অক্ষমতার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এনামুল। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার করে বুলেট বের করাটা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরে খাবার নেই, তার ওপর চিকিৎসার ব্যয়। কিভাবে বহন করবেন এনামুল?

মোঃ এনামুল হক জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামের  মৃত বেলাল হোসেন ও মোছাঃ আমিনা বেগমের পুত্র। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। বাবার মৃত্যুর পর দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন। মা, ছোট দুই ভাই- বোন, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পরিবারের ছয় জন মানুষের খাদ্য যোগাবেন কিভাবে সেই ভাবনায়ও অস্থির হয়ে আছেন।

আন্দোলনে আহত এনামুল হক বাসসকে বলেন, ‘কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শহরে গত ৪ আগস্ট শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। বিকেলে ছাত্রদের সাথে মিছিলে যোগ দেই। মিছিলটি ভুরুঙ্গামারী থানার সামনে আসলে আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। এতে ঐ মিছিলে থাকা আমিসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। এ সময় আমার মাথা, হাত-পা ও পিঠে ৫০ টির মতো রাবার বুলেটে লাগে। আহত অবস্থায় বন্ধুরা আমাকে আমার আত্মীয়র বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি।’

তিনি আরো বলেন, ঘটনার তিনদিন পর হঠাৎ আমার মাথা প্রচুর ঝিমঝিম করতে থাকে। রংপুর ইসলামিক কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাকি বুলেট বের করি। এখন আমার মাথায় ৭ টি রাবার বুলেট আছে। হাতে ১ টা ও উরুতে ৫ টা। সেগুলো এখনও বের করা যায়নি। চিকিৎসক বলেছেন,  সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নাই। তাই অপারেশন করাতে পারছি না।

এনামুল হকের মা মোছাঃ আমিনা বেগম (৪২) বাসসকে বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে এনামুলের দিন মজুরের টাকা দিয়ে সংসার চলতো। আন্দোলনে গিয়ে সে আহত হয়েছে। কাজ করতে পারে না। এখন সংসার চালানোর টাকা নাই, চিকিৎসা করাবো কিভাবে?

এনামুলের স্ত্রী শিমু আক্তার (২১) বলেন, আমার স্বামীর আয় দিয়ে কোনমতে এতোগুলো মানুষের খাওয়া-পরা চলতো। ঘরে আমাদের দুই বছর বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। এখন আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে। সংসারের খরচ আর তার চিকিৎসা খরচ নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। এ অবস্থায় আর্থিক সহায়তা পেলে আমাদের খুবই উপকার হতো।  

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোঃ গোলাম ফেরদৌস বাসসকে বলেন, আহত এনামুল হকের বিষয়টি এখনই জানতে পারলাম। অফিসে আসলে বিষয়টি দেখবো।

পরিবার জানায়, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এনামুলের পরিবার কোন আর্থিক সহায়তা পায়নি। তবে সম্প্রতি রংপুরের র‌্যাব-১৩ এনামুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে। বর্তমানে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিগগীরই তার শরীরের সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।