শিরোনাম
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১৭ অক্টোবর ২০২৪ (বাসস) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন আবির।
স্বৈরাচার হটানোর শপথ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন তিনি। আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো হামলায় প্রথমে আহত হন আবির। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আবির প্রতিবাদি ছিলেন সবসময়ই। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ করতে করতেই দেশের জন্যে শহিদ হলেন তিনি।
আবদুল্লাহ আল আবির, বয়স ২৪ বছর। তার পিতার নাম মিজানুর রহমান এবং মাতার নাম পারভীন সুলতানা। আবিরের পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চিন্নারকাঠি গ্রামে। কিন্তু আবিরের বেড়ে ওঠা নগরীর গোরাচাঁদ দাস রোডের ‘মাহমুদালয়’ নামের এক প্রাচীন বাড়িতে (ওর মামার বাসায়)।
আবির রাজধানীর ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন।
গত ১৯ জুলাই বিকেলে বোনের বাসা থেকে কর্মস্থল বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পথে বের হন। কিন্তু প্রতিবাদি সত্তার আবির প্রতিবাদকেই বেছে নিলেন। তাই কর্মস্থলে না গিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচিতে মিশে যান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯ জুলাই রাজধানীর বারিধারা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন আবির। পরে ২০ জুলাই সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তারপর তাকে গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আবির বরিশাল উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন রাজধানীর মিরপুর বাংলা কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। খেলাধুলা নিয়ে থাকা আবিরের পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না। বছর খানেক আগে একমাত্র বড় বোন মারিয়া ইসলাম মৌরী ভাইকে ঢাকায় নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবির বোনের বাসায়ই থাকতেন আবির।
শহিদ আবিরের বাবা মিজানুর রহমান ও বড় বোন মারিয়া ইসলাম মৌরী বাসস’কে বলেন, জুলাই-এর গণঅভ্যুত্থানে যখন ঢাকার রাজপথে হামলা শুরু হয় তখন থেকেই আমরা ভয়ে ছিলাম। আর শুধু ভাবতাম আমাদের ‘আবির’ অফিসে যাবে কিভাবে? আমাদের আশংকাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। গত ১৯ জুলাই আমাদের কাছে আসে মর্মান্তিক সেই খবর। খবর পেয়ে ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার নিথর দেহ। পরে বাড়িতে এনে তাকে দাফন করি।
আবির ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারটির এখন দিশেহারা অবস্থা। আর্থিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও তারা ভেঙে পড়েছেন। বিশেষ করে আবির তার বড়ো বোন মৌরির ছিলেন বিশেষ প্রিয়। অনেক আদর করতেন তিনি ছোট ভাইটিকে। কিন্তু ছোট ভাইটিকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন মৌরি।
তিনি বলছেন, ভাই আমার খুবই আদরের ছিলো। ছোট বেলা থেকেই সে ছিল আমার খুব ন্যাওটা। ঢাকায় এনেও আমি তাকে আমার কাছে রেখেছিলাম । কিন্তু ভাইটি আমার এখন কোথায় হারিয়ে গেল? তাকে কি আমি আর কোথাও খুঁজে পাবো না? ভাইটি কি আর ফিরে আসবে না, কখনও?
অশ্রুভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আবিরের বড়ো বোন মৌরি।
এদিকে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বাসস’কে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে জেলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন শহীদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁদের তালিকা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াবে বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁরা পর্যায়ক্রমে সবার পরিবারের কাছে যাবেন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহায়তা দেবেন।
তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্ট-এর গণঅভ্যুত্থানে ২০ জুলাই সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদ হন আবদুল্লাহ আল আবির। এরই ধাবাহিকতায় পরিবারগুলোর বিভিন্ন প্রকার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তাদের স্থানীয় ভাবে আর্থিক সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।