বাসস
  ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:২৫

শহিদ গউসের জন্যে আজো কাঁদেন তার মা

॥ সেলিম-শুয়াইব ॥
সিলেট, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস):বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন শহিদ গউস উদ্দিন। তার জন্যে আজো কেঁদে কেঁদে দিন কাটাচ্ছেন মা লেবু বেগম। তিনি ভুলতে পারেন না, সেই দিনটির কথা। তার ছেলে গউস দুপুরের দিকে ঘরে আসে। খুব তাড়াহুড়ো করে খাওয়া-দাওয়া সারে। অভ্যাস মতো খাটে একটু শুতেই ফোন আসতে থাকে। মা বুঝতে পারেন ছেলে বার বার ফোন রিসিভ করছেন। এক পর্যায়ে ঘর থেকে বেরুচ্ছিলেন, মা সন্তানকে বললেন, চারদিকে গন্ডগোল হচ্ছে ঘরে থাকো বাবা, বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। কথাটা বলতেই গউস মায়ের পায়ে ধরে সালাম করে বলে ‘মাই গো দোয়া করিও, দেশোর লাগি যাইয়ার’ মরলে শহিদ আর বাঁচলে গাজি। মা অবাক হয়ে যান, গউস সাধারণত ঈদের সময় পায়ে ধরে সালাম করে, তবুও সব সময়ের মতো বলেন, ‘যাওরে পুত আল্লাহর হাওলা।’ দিনটি ছিল ৪ আগস্ট ২০২৪।

গউস সেই যে ঘর ছেড়েছিল, আর ফিরে আসেনি, এসেছিল তার লাশ। সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর ঘোষগাঁও গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে গউস উদ্দিন। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকসা চালক,৭/৮ বছর ধরে অটোরিকসা চালাচ্ছেন। বয়স তিরিশ। বিয়ে করেন নি। তারা ছয় ভাই এক বোন। গউস ভাইদের মধ্যে পঞ্চম।

গউস উদ্দিনের ভাই আবুল কালাম হাসপাতাল থেকে গউসের লাশ গ্রহণ করেছিলেন। বললেন, ৪ আগস্ট তখন গোলাপগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে। চারদিক থেকে মিছিল, হামলা-প্রতিরোধের খবর আসছিলো। বেলা চারটা সাড়ে চারটার দিকে তার কাছে ফোন করেন চাচাতো ভাই হাসান, জানান গউসের গায়ে গুলি লেগেছে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। জায়গাটি গোলাপগঞ্জ থানা ভবন থেকে দেখা যায়। কালাম দৌড়ে দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসেন। দেখতে পান গউসের অবস্থা খুব খারাপ, রক্ত ঝরছে। তাকে দ্রুত গোলাপগঞ্জের পাশের উপজেলা দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেট বিভাগীয় হেডকোয়ার্টারে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। গউসের অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো, তারপর অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ আগস্ট গউসের পরিবার লাশ গ্রহণ করে।

কালাম জানান, গউসের পেটে গুলি লাগে। পেটের সামনের দিকে ছোট একটি ছিদ্র, পেছন দিকে ছিদ্রটি বড়ো হয়ে গেছে। আসরের পর গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি বড় মোকাম ঈদগাহে জানাজা শেষে তাকে ঈদগাহ সংলগ্ন গোরস্থানে দাফন করা হয়। সেই জানাজায় সমবেত হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ, যা ছিলো গোলাপগঞ্জে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা।

গউস উদ্দিনের মৃত্যুর পর ছেলে হারানোর শোকে তার মা লেবু বেগমের অসুস্থতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ। কয়েকদিন পর পরই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়। আমরা যখন গউস উদ্দিনের বাড়িতে যাই, তখনো তিনি ছিলেন হাসপাতালে। সবকথা খুব গুছিয়ে বলতে পারেন না। তবুও মা কেঁদে কেঁদে বললেন, আমার ‘লাখান (মতো) আর কোনো মা’র বুক খালি হউক না।’ তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চান। একই সাথে আরো যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, সেই সব হত্যাকান্ডেরও বিচার চান।