শিরোনাম
॥ ইব্রাহিম খলিল মামুন ॥
কক্সবাজার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস): মোঃ আয়মান ফারুকীর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বড় ব্যাংক কর্মকর্তা হবেন। সেই আশায় বুক বেঁধে প্রবল আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথ এখন হাহাকারে ভরা। তিনি কি পারবেন স্বপ্ন পূরণের পথে সোজা হয়ে দাঁড়াতে? সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে?
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে দ’ুপায়েই গুলি লাগে আয়মানের। আয়মান ফারুকী (২২) এখন বিছানায়। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর অবস্থাতে নেই। পায়ের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। আর দিন গুণছেন স্বপ্ন পূরণের আশায়। কবে তিনি সুস্থ হবেন? কবে শুরু করবেন তার পড়ালেখা?
আয়মান ফারুকীর বাড়ি কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাহাড়তলী এলাকায়। তিনি ব্যবসায়ী মৃত ফরিদুল আলম ফারকী ও ছলিমা খাতুনের ছেলে। আয়মান কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
স্বজনেরা জানান, তীব্র গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে হাজারো জনতা রাস্তায় আনন্দ মিছিলে অংশ নেয়। অংশ নেন আয়মান ফারুকীও। মিছিলটি শহরের কালুর দোকান থেকে প্রধান সড়ক হয়ে পশ্চিম দিকে যাওয়ার পথে থানা রাস্তার মাথায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তের বেপরোয়া গুলিতে আয়মান গুলিবিদ্ধ হন। তার দুই পায়ে হাঁটুর উপরে গুলি লাগে। এ সময় সহকর্মীরা তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় তাকে বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিবে ভর্তি করান। গভীর রাতে সেখানেই আয়মানের পায়ে অস্ত্রোপচার করে বুলেট বের করা হয়।
সম্প্রতি আয়মান ফারুকীর বাসায় গিয়ে দরজা নক করতেই একপাশে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দেন আয়মানের বড় ভাই মনির আলম ফারুকী। বাসায় ঢুকে দেখা যায়, একটা কক্ষে আয়মান ফারুকী শুয়ে আছেন বিছানায়। সাংবাদিক এসেছে শুনে তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। নীরবে তার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। পুরো মুখে ছড়িয়ে রয়েছে বিষন্নতার ছাপ।
আয়মান ফারুকী বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতে থাকি। গত ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন– এমন সংবাদ পেয়ে শহরের কালুর দোকান এলাকায় সবাই জড়ো হয়। আমিও দুপুরের ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হই। বিকেল চারটার দিকে বিজয় মিছিল নিয়ে প্রধান সড়ক হয়ে পশ্চিম দিকে যেতে থাকি। মিছিলটি থানা রাস্তার মাথায় যাওয়ার সাথে সাথে মুখোশধারী কিছু দুর্বৃত্ত গুলি চালাতে শুরু করে। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। আমার দুপায়ে গুলি লাগে।’
এ সময় সহকর্মীরা আয়মানসহ আহতদের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জানায়, আয়মানের এক পায়ে দ্রুত অস্ত্রোপচার লাগবে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তখন কোন সার্জন ছিল না। পরে রাত তিনটার দিকে কাছের বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল খতিবে আয়মানকে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর থেকে ওই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ইকবালের তত্ত্বাবধানে আয়মানের চিকিৎসা চলছে।
এখন পর্যন্ত সরকারি কোন চিকিৎসা সহায়তা পাননি জানিয়ে আয়মান ফারুকী বলেন, রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছি। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে বাসার বাইরে যেতে না পারায় সেই স্বাধীনতা দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও সহকর্মীদের কাছ থেকে স্বাধীনতার বিভিন্ন গল্প শোনে মনকে কিছুটা সান্ত¡না দিচ্ছি।
আয়মানের চিকিৎসক জাফর ইকবাল জানান, তার দুই পায়ে গুলি লাগে। ডান পা অনেকটা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করে বুলেটটি বের করতে হয়েছে। এখন কয়েক মাস বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। আশা করি এরপর সুস্থ হয়ে উঠবে আয়মান। আগের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারবেন।
আয়মানের বড় ভাই মনির আলম ফারুকী বলেন, প্রায় এক বছর হয়ে গেছে বাবা মারা গেছেন। বাবা হারানোর বেদনা আয়মানকে কখনো বুঝতে দেইনি। পরিবারে ৬ ভাই ৭ বোনের মধ্যে আয়মান ৯ নাম্বারে হলেও সবার স্বপ্ন আয়মান বড় হয়ে ব্যংক কর্মকর্তা হবেন। সেই স্বপ্নের পূরণের পথে বড়ো বাধা হয়ে উঠেছে দুর্বত্তের ছোঁড়া গুলি।
মনির আলম আরো বলেন, চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক ব্যবসা থেকে এতো অর্থের যোগান দেয়া আমাদের জন্যে খুবই কষ্টকর ব্যাপার। সরকারি বেসরকারি যে কোন পর্যায় থেকে কেউ যদি আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত তাহলে আমার ভাইটাকে সুস্থ করতে অনেক সহজ হতো। আয়মানও তার স্বপ্ন পূরণের পথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে পারতো।