বাসস
  ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২১
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৯

ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান শহিদ শফিকুলের মা

॥ রুপোকুর রহমান ॥
সাভার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা চেয়েছেন সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে শহিদ দিনমজুর শফিকুলের বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম (৫৯)।

ছেলে হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে জীবনের শেষ বয়সে এসে ভবিষ্যত নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি।

শফিকুল ইসলাম (৩২), বাবা আবু বকর মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা থানার বড় দরগাঁর ফকিরা গ্রামে। প্রায় ২৫বছর ধরে সাভারেই বসবাস করছেন শফিকুল ইসলাম ও তার পরিবার। রয়েছে বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে শফিকুল ইসলাম তৃতীয়।

বড় বোন আয়েশা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। রয়েছে স্বামী সংসার। বড় ভাই রফিকুল ইসলামও বিয়ে করে সংসার করছেন। ছোট ভাই রবিউল ইসলামের সাথেই সাভার পৌরসভার পূর্ব ভাগলপুর মহল্লার জনৈক শহীদুলের ১৩০/১০ নং বাড়িতে বসবাস করতো শফিকুল। দেখ ভাল করতো বৃদ্ধা মায়েরও। এভাবেই চলছিল শফিকুলের সংসার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিজয় মিছিল দেখতে বাইরে বেরিয়ে যায় শফিকুল। এসময় মুক্তির মোড় সংলগ্ন একটি বহুতল ভবন থেকে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণে সাভার পৌরসভার মুক্তির মোড় সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন শফিকুল।

শহীদ শফিকুল ইসলামের বড় বোন আয়েশা আক্তার বাসস’কে বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরে ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তখন আমার ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যা নেমে গেলেও আমার ভাইয়ের কোন খোঁজ আমরা পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমাদের প্রতিবেশি আলমগীর মিয়া তার ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে আমার ভাইকে মুক্তির মোড় সংলগ্ন ঈদগাঁ মাঠে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের খবর দেন। আমার ভাই ওখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তখন আমরা ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় আমার ভাইকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে ওকে বাসায় নিয়ে আসি। তিনি বলেন, ভাইকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান। সবসময়ই আমাদের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে। ভাইকে তো আর ফিরে পাবো না, তবে আমরা চাই ভাই হত্যার বিচার।  এছাড়াও আমাদের বৃদ্ধা মায়ের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের  দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

শহীদ শফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বাসস’কে জানান, আমার ছোট ভাই দিন মজুর শফিকুলই আমার মা’য়ের দেখা শোনা করতো। গত ৫ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হলেও এক প্রতিবেশির মাধ্যমে আমরা খবর পাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে। ওকে বহুতল ভবন থেকে গুলি করে। একটি গুলি ওর মাথার পিছন দিক দিয়ে ঢুকে গলার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ওখানকার আশপাশের অবস্থা ভালো না থাকায় আমরা ওখানে যেতে পারছিলাম না।

পুলিশসহ অন্যরা গোলাগুলি করছিল। পরে পরিস্থতি একটু স্বাভাবিক হলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শফিকুলকে ধরাধরি করে রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা বলেন শফিকুল মারা গেছে। পরদিন ৬ আগস্ট সাভার পৌরসভার তালবাগ কবরস্তানে আমার ভাই শফিকুলের লাশ দাফন করি।

শহীদ শফিকুল ইসলামের ছোট ভাই রবিউল ইসলাম বাসস’কে জানান, আমরা দুই ভাই আমি আর শফিকুল এক ঘরেই ঘুমাতাম। আমাদের মধ্যে ছিল অনেক মিল। অনেক সুখ দুঃখের গল্প করতাম। কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমার ভাই আর নেই, কোনভাবেই তা বিশ^াস করতে পারছি না। এসময় ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।

শহীদ শফিকুল ইসলামের বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বাসস’কে বলেন, আমার বুকের মানিক শফিকুল আর নেই। ঘাতকরা ওকে মেরে ফেলেছে। আমাকে করেছে সন্তান হারা। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি চাই ওকে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি হোক। সাহেরা বেগম বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পুত্র হারানোর শোক আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। ছেলেটি ছিল আমার খুুবই সাংসারিক। যা আয় করতো তা আমার হাতেই তুলে দিতো। এলাকার সবাই ওকে খুব ভাল জানতো। কারো সাথে কখনো খারাপ আচরন করেনি। ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়ে এসময় তিনি বলেন, এখন আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। কিভাবে চলবে আমার বাকি জীবন। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চান তিনি।

শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার বোন আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছে পরিবারটি। এছাড়া আর কোন সহায়তা পাননি তারা।