শিরোনাম
॥ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ॥
হবিগঞ্জ, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : শহিদ নয়ন ছিলেন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। তার আয়েই চলত সংসারের সকল খরচ। এখন তাকে হারিয়ে সংসার চলে অন্যের দয়া ও সহযোগিতায়।
এদিকে প্রতি মুহুর্তে সন্তানের কথা চিন্তা করে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন গর্ভধারিণী মা ঝর্ণা বেগম(৫০)। কোন অবস্থাতেই তিনি নয়নকে ভুলতে পারছেন না। এমনকি স্বজনেরাও নয়নের জন্যে হাহাকার করছেন। কারণ সকলের নয়নমণি নয়ন এখন অচেনালোকে, অন্য পৃথিবীতে।
গত ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জেলার বানিয়াচং উপজেলায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন শেখ নয়ন হোসেন (২০)। সে বানিয়াচং উপজেলার কামালখানী মহল্লার মৃত আলী হোসেনের(৫৫) ছেলে।
নয়ন বন্ধুদের আহ্বানে সাড়া নিয়ে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেতেন । মারা যাওয়ার দিনেও এক বন্ধুর ফোন পেয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
অল্প বয়সেই নয়ন বাবাকে হারান। এরপর থেকেই ছয় বোন ও মায়ের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। একটি মিশুক চালিয়ে সংসারের সকল খরচ মেটাতেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বন্ধুদের সাথে বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন নয়ন। হঠাৎ মিছিলে হামলা চালায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন নয়ন।
নয়নের মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। চরম দুর্ভোগে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। কারণ পরিবারে আর নেই কোন উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাই তার পরিবার চলে এখন অন্যের দয়া ও সহযোগিতায়।
নয়ন ছিল পরিবারের ছয় বোনের মাঝে চতুর্থ। নয়ন মারা যাওয়ার পর এখন সংসারের ঘানি টানছেন মা ঝর্ণা বেগম।
শহিদ নয়নের মা ঝর্ণা বেগম বাসসকে জানান, আমার পরিবারের একমাত্র ছেলে নয়ন মিশুক (ইজিবাইক) চালিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাত। সে মারা যাওয়ার পর বিএনপি ও জামায়াতের কাছ থেকে কিছু অনুদান ও সহযোগিতা পেয়েছি। এখন আমাদের সংসার চলে অন্যের দয়ায়। পরিবারে কোন উপার্জনকারী ব্যক্তি নেই। ভীষণ কষ্ট করে আমাদের চলতে হচ্ছে। সরকার সাহায্য না করলে আমাদের আর বাঁচার উপায় থাকবে না।
নিহত নয়নের বড়বোন সোহেনা বেগম জানান, ‘আমাদের পরিবারে একমাত্র পুরুষ সদস্য ছিল নয়ন। আমার ভাই নয়ন আমাদের দেখাশুনা করত। এখনো আমার তিন বোন অবিবাহিত। তাদের বিয়ের ব্যবস্থা কে করবে, কে আমাদের খাওয়াবে এই চিন্তায় আমাদের ঘুম নেই। নয়ন ছিল আমাদের নয়নমণি।’
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমাদের একটু সহযোগিতা করুন। তাহলে আমরা কোন রকম বেঁচে থাকতে পারবো। আমাদের সবশেষ হয়ে গেছে। দেখার কেউ নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠ তদন্ত করে আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার হোক। বিচার পেলে কিছুটা হলেও নিজেকে সান্ত¡না দিতে পারব।
প্রতিবেশী নূরজাহান বেগম জানান, নয়ন মারা যাওয়ার পর এখন তাদের আর দেখার কেউ নেই। প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে পরিবারটিকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। তবে এই সহযোগিতা খুবই নগন্য। দরকার সরকারি সাহায্য, সহযোগিতা। সরকার পরিবারটির পাশে দাঁড়ালে তারা বেঁচে যেত।