শিরোনাম
\ আবদুস সালাম আজাদ জুয়েল \
ঢাকা, ১ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): রাজধানীর উত্তরায় একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির গাড়িচালক আমির হোসেন (৩২)। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানকার লোকজনের সাথে উত্তরা এলাকায় বিজয় মিছিলে যোগ দেন। সেখানেই বুকে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন আমির হোসেন। আমির হোসেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে।
সম্প্রতি শহিদ আমিরের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা ও মায়ের সাথে। বাড়ির সামনেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তার লাশ। কবরের পাশেই খুটিতে লাগানো আছে জাতীয় পতাকা। আমির হোসেন এলাকায় পরিচিত না হলেও শহিদ হওয়ার পর থেকে নিজ গ্রামের ছোট-বড় সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।
আমির হোসেনের মা রাহিমা বেগম (৫৫) গৃহিনী। তারা ৩ ভাই ও ৪ বোন। ভাই বোনদের মধ্যে শহিদ আমির হোসেন তৃতীয়। স্থানীয় বড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। এরআগে বড়গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ শ্রেণির পাঠ শেষ করেছেন।
শহিদ আমির হোসেন নিজের পছন্দে বিয়ে করেন। কুমিল্লা জেলার লাকসামের মেয়ে জেসমিন আক্তার রুপাকে। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে ইয়াছিন (৪) ও ছোট ছেলে ইব্রাহীম। বয়স দেড় বছর। গ্রামে নিজের দুইচালা একটি ঘর থাকলেও স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন আব্দুল্লাপুর এলাকায় একটি বাড়া বাড়িতে।
আমির হোসেনের মা রাহিমা বেগম বলেন, ৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে আমি ও আমার স্বামী চট্টগ্রামে বড় দুই ছেলের বাসায় বেড়াতে যাই। ৫ আগষ্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমার ছেলে শহিদ আমির হোসেন আমাকে ফোন দেয়। আমাদের খোঁজ খবর নেয়। ফোনে আমাকে ছেলে বলছিল-মা ‘শেখ হাসিনাকে গদি থেকে নামাইয়ে দিছে। আমিও যাই।’
কোথায় যাই সে কথা বুঝতে পারি নাই। পরে জানতে পারলাম ছেলে বিজয় মিছিলে গিয়েছে। এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিমা বেগম।
তিনি বলেন, আমার ছেলে সব সময় ফোন করে খোঁজ নিত আমাদের। কেন আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হলো তার বিচার চাই। কিভাবে চলবে আমাদের অভাবের সংসার। আমির হোসেনের বাবা খোরশেদ আলম বলেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম থেকেই জানতে পারি আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। সেখান থেকে আমাকে ফোন করে হাসপাতালের লোকজন। আমার দুই জামাতা জহিরুল ইসলাম ও হাবিব ঢাকায় থাকেন। তাদের সাথে কথা বলে হাসপাতালে পাঠাই। তারা মরদেহ নিয়ে জহিরুল ইসলামের কর্মস্থল নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জে নিয়ে রাতে রাখে। পরদিন ৬ আগস্ট সকালে বাড়িতে নিয়ে আসে। দুপুর ১২টার দিকে জানাজা শেষে ছেলেকে দাফন করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর ছেলেও বউ বাড়িতে চলে আসেন নাতিদের নিয়ে। উত্তরা থেকে ফোন আসে যাওয়ার জন্য। সেখানে জামায়াত নেতারা ২লাখ টাকা এবং অন্যান্য লোকজন অনুদানসহ ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা অনুদান দেন ছেলের বউকে। এরপর আমরা বাড়িতে চলে আসি। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেয়। ছেলের বউ বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে আছে। আমি নিজেই তাকে তার বাবার বাড়ি লাকসামে দিয়ে আসি।
ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রকৌশলী শাকিল আহমেদ টেলিফোনে বাসস’র স্থানীয় প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আমির হোসেন আমাদের ড্রাইভার ছিল। গত ৫ আগষ্ট আমাদের অফিস ছুটি ছিল। পরে বিকেলে শুনেছি সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আমরা কোম্পানির পক্ষ থেকে তার জন্য গাড়ি ঠিক করে দিয়েছি এবং দাফন-কাপনের জন্য খরচ দিয়েছি।
গাড়িচালক শহিদ আমির হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন আমরা কি নিয়ে বাচঁবো। ছোট দুটো বাচ্চাকে নিয়ে কি করে সামনে আমি তাদেরকে খাওয়াতে পড়াতে পারবো। আমার স্বামী আমাকে এবং সন্তানদের খুব ভালোবাসতেন। কত স্বপ্ন ছিল বাচ্চাদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করবে। তা আর হলো না।
সরকারি এবং মানুষের সাহায্য ছাড়া সামনে চলা একেবারেই অসম্ভব। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদেরকে সহযোগিতার আওতায় এনে চলার মত ব্যাবস্থা করে দিতে।