শিরোনাম
॥ বিকাস সরকার ॥
নোয়াখালী, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ আহসান হাবিব তামিমের স্বপ্ন ছিল সরকারি বড় কর্মকর্তা হওয়ার। পূরণ হলো না তার সেই স্বপ্ন।
তামিম নোয়াখালী জেলার চাটখিলের ১নং সাহাপুর ইউনিয়নের পূর্ব শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ মুন্সিবাড়ীর মোঃ আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ১ম বর্ষের (সম্মান) ছাত্র ছিলেন। বৈষম বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মিরপুর ১০ নং গোল চত্বরে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে সহযোগিরা পাশ^বর্তী আলহেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তার। সে অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরের ডান পাঁজরের নিচ ও বাম হাত গুলিবিদ্ধ হয়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে তামিম ছিলেন দ্বিতীয়। লেখাপড়ার সাথে সাথে কম্পিউটারও শিখতেন। মাঝে মধ্যে তার বাবাকে অটো-মেকানিক্সের কাজে সহযোগিতা করতেন। বড় ভাই আরমান হোসেন তার বাবার সাথে অটো মেকানিক্সের কাজ করেন। ছোট ভাই রায়হান (৪) এখনো শিশু। তাছাড়া মা রাজিয়া সুলতানা (৩৫) গৃহিণী। পরিবারের সকলে ঢাকায় বসবাস করেন।
তামিমের বাবা আব্দুল মান্নান(৪৫)ব্যবসায়ী। ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর৫৬ সেনপাড়াএলাকায়তার মটর মেকানিক্সের ব্যবসা রয়েছে।
তিনি জানান, তামিমের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বড় হয়ে একটা সরকারি চাকুির করবে। বাবা-মার দুঃখ কষ্ট লাঘব করে তাদের মুখে হাসি ফোটাবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছে। কিন্তু তার ছেলের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তামিম মেধাবী ছাত্র ছিল। তার আস্থা ও বিশ^াস ছিল, কোটা প্রথা বাদ না হলে, যত ভাল লেখাপড়া করুক না কেন এ দিয়ে কোন কাজে আসবে না। কোটা প্রথা বাতিল হলে মেধাগুণে একটা ভালো সরকারি চাকুরি হবে। চাকুির হলে বাবা-মার দুঃখ-কষ্ট লাঘব হবে। তাদের মুখে হাসি ফুটবে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হল না। পুলিশের গুলিতে সব শেষ হয়ে গেলো।
গত ১৯ জুলাই শুকবার সকালে তামিম আন্দোলনে অংশ নিয়ে পরে দুপুরে বাসায় এসে নামাজ পড়ে এবং খাবার খায়। এ সময় তার বাবা-মা তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্ত খাবার পর বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে সে চুপ করে বাসা থেকে বেরিয়ে আন্দোলনে চলে যায়। সন্ধ্যায় তার সহযোগিরা তার বাবা-মাকে খবর দেয় তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার। তারা সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তার লাশ চাটখিল উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
তামিমের মৃত্যুর পর তার পরিবার সরকারি ভাবে ৫০ হাজার টাকা এবং জামায়াতে ইসলামির পক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা পায়। তবে অন্য কেউ তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি যাদের আহ্বানে আন্দোলনে গিয়ে তামিম শহিদ হয়েছেন, তারাও কোন খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ করেন বাবা আবদুল মান্নান।