শিরোনাম
রাজশাহী, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : রিয়াদের গুলিবিদ্ধ হাড়ে একাধিক ফাটল। চিকিৎসা চলছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ভীষণ উন্মুখ রিয়াদ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মনেপ্রাণে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হন মুহম্মদ রিয়াদ আলী খন্দকার। সেই থেকে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে কাটছে তার জীবন।
বাসসের সাথে মুঠোফোনালাপে রিয়াদ বলেন, ‘আমার শরীরে গুলির আঘাতগুলো এতোটাই গুরুতর যে, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা গভীর দুঃশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। জানি না কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। আদৌ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো কি না, তাও জানি না।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে নামা ছাত্রদের আন্দোলনটি এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়েছে প্রায় চারমাস হতে চললো। এই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রিয়াদ এখনো চিকিৎসাধীন। সে ভীষণ উদ্বেগ ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
রিয়াদ কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন। তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জেলার গোদাগাড়ী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র রিয়াদ (২০) এখন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি সহায়ক ডিভাইসের মাধ্যমে তার চলাফেরার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
রিয়াদ জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতন আন্দোলনের দিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গোদাগাড়ী ক্রসিংয়ে পুলিশের ছোঁড়া গুলি তার বাম উরুতে বিদ্ধ হয়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আরএমসিএইচ)- চিকিৎসকরা ১৫ আগস্ট হাড় ছিদ্র করে গুলিটি বের করেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও চিকিৎসা করতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৪ আগস্ট তাকে ঢাকায় রেফার করে।
আরএমসিএইচের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান ডাঃ আলমগীর হোসেন বাসসকে বলেন, ‘বুলেটের আঘাতে রিয়াদের উরুর হাড়ে একাধিক ফাটল হয়েছে। এতে তার স্নায়ু ও টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে তার হাঁটু ও পা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।’
গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার সিএমএইচ-এ রিয়াদের আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এক মাস পর ফলো-আপ চেকআপের পরামর্শ দিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
ডাঃ আলমগীর হোসেন বাসসকে জানান, রিয়াদের জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে স্নায়ু এবং টেন্ডন পুনরায় সক্রিয়করণ সম্পর্কিত একটি জটিল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার শিমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ (৬৫) ও জোস্নারা বেগম(৫৮) দম্পতির সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে রিয়াদ দ্বিতীয়। গোদাগাড়ী পৌরসভা অফিসের সামনে রাস্তার পাশে খাবারের দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ চালান তিনি।
রিয়াদের পিতা ওবায়দুল্লাহ বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, সেদিনের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার ছেলে রিয়াদসহ প্রায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে পুলিশ অত্যন্ত তৎপর ছিলো। তারা ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী ক্রসিং এলাকায় ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে প্রাণঘাতী হামলা চালায় এবং এতে বহু মানুষ আহত হয়।
তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তিনি তার ছেলের বীরত্বে গর্ববোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বুলেটের আঘাত থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে সেই আশায় দিন গুণছি।’
তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে ৭২ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।