শিরোনাম
প্রতিবেদন : কালাম আজাদ
বগুড়া, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : স্বামী কমর উদ্দিন বাঙ্গিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী তহমিনা আক্তার। এত তাড়াড়াড়ি আনন্দের সংসারেবিষাদ নেমে আসবে ভাবতেই পারেননি। এখন তিন সন্তান এবং অনাগত এক সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। বাঙ্গিকে হারিয়ে এখন তার সংসারেনেমে এসেছে অন্ধকারের কালো ছায়া। ভাত খাওয়ানোর মানুষটি না থাকায় করুণ অবস্থায় দিন পার করছে পরিবারটি।
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে নিহত হন কমর উদ্দিন খানবাঙ্গি (৪০)। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক ছিলেন। বাঙ্গি বগুড়া সদর উপজেলার চকআকাশ তারা গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিন খানের ছেলে। সাত ভাইবোনের মধ্যে কমরউদ্দিন সবার ছোট।
কমর উদ্দিন না থাকায় দুর্দশায় পড়েছে পরিবারটি। আগে তবু কোনমতে টেনেটুনে সংসার চলত। এখন সে অবস্থা নেই। পরিবারে খাদ্যের যোগান দেয়া মানুষটি না থাকায় ভয়াবহ অবস্থায় দিন পারকরছেন তাহমিনা। সহায় সম্বলহীন পরিবারের সদস্যদের তিনবেলা খাবার জোটাতে তিনি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।
শহিদ কমর উদ্দিনের ভাতিজা জহুরুল ইসলাম জীবন বলেন, গত ৪ আগস্ট বগুড়া শহরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে বাড়ি থেকে সকালে বেরহয়েছিলেন চাচা কমর উদ্দিন খান বাঙ্গি। বিকেলে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে দেখাহয়। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ। খোঁজ করার একপর্যায়ে সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায়,তার মরদেহ পড়ে আছে বগুড়া শহরের নবাববাড়ি সড়কে।
এরপর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তারমরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলিতেশহিদ হয়েছেন তিনি। গোটা শরীরেই বুলেটবিদ্ধ ছিল তার।
তিনি আরও জানান, বিকেলে চাচাকে আলতাফুননেছা খেলার মাঠের কাছে দেখেছেনঅনেকেই। তাদের মতে পুলিশ প্লাজার কাছে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
নিহত কমর উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্রব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তার পরিবার। তিন সন্তান নিয়ে নির্বাক নিস্তব্ধ স্ত্রী তহমিনা আক্তার। গর্ভে রয়েছে ৭ মাসের সন্তান। ষাটোর্ধ্ব মা জমেলা বেওয়াও তাদের সংসারে। সহায় সম্বল বলে কিছুই নেই। আছে শুধু থাকারএকটিমাত্র ঘর।
বড় মেয়েটি কাজলীর বয়স এখন ১৭ বছর। সাত বছরের ছেলে তৌহিদস্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট ছেলে আবদুল্লাহর বয়স দুই বছর। এখনও সে মায়ের কোলে। এদিকে গর্ভেরয়েছে সাত মাসের সন্তান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একেবারেইপথে বসেছে হতদরিদ্র পরিবারটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে সামান্য সাহায্য এলেও,কীভাবে দিন কাটছে, কীভাবে সংসার চলছে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউকোনো খোঁজখবর নেয়নি।
কমর উদ্দিনের মা জমেলা বেগম জানান, ছেলে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো, আরফেরেনি। তার বুকে পিঠেসহ গোটা শরীরেই বুলেটবিদ্ধ ছিল। ছেলে আর ফিরবে না।ভাতও খাওয়াবে না। এখন কীভাবে জীবন চলবে সেই চিন্তায় অশ্রুসিক্ত হচ্ছেনবার বার।
কমর উদ্দিনের বড় মেয়ে বিবাহযোগ্য, তাকে বিয়ে দিতে হবে। সংসারেরএকমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন কী হবে, সেই চিন্তায় অস্থির দশা তাদের।
আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্তচেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে জেলা বিএনপি সাধ্যমতো নিহত পরিবারেরপাশে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এসব পরিবারের দেখাশোনা করা হবে।