শিরোনাম
প্রতিবেদন: মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন
ফেনী, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : যন্ত্রণায় দিন কাটছে সাকিবের। শরীরে অসহ্য ব্যথা। নিভে গেছে বাম চোখের আলো। মাথা ও আরেক চোখে তিন শতাধিক গুলি নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতর দিন কাটছে তার।
ফেনী জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছররা গুলিতে মারাত্মক আহত হন সাহেদুল ইসলাম সাকিব(২২)। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), সিএমএইচ সহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিলেও এসব গুলি এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে।
সাকিবের মাথা, মুখ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক ছররা গুলি লাগায় চিকিৎসকদের পরামর্শ দেশের বাইরে যাওয়ার। উন্নত চিকিৎসা নেয়ার। কিন্তু অর্থাভাবে সেটি সম্ভব না হওয়ায় চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার।
সাকিবের মা মনোয়ারা বেগম(৪০) বাসসকে জানান, গত কদিন আগে সাকিবকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অর্থোসার্জারি প্রফেসর ডা: জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার অপারেশন হয়। এর মাধ্যমে মাথা থেকে দুটি ও কপাল থেকে একটি ছররা গুলি বের করা হয়।
ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ যশপুর ওয়ার্ডের মির্জাপাড়ার বাসিন্দা সাহেদুল ইসলাম সাকিব। তিনি স্থানীয় মৌলভী সামছুল করিম মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতেন। দুই ভাই-দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা নূর আলম অ্যাজমা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন বহু আগে। বড় ভাই তৌহিদুল ইসলামের আয়ে সংসার চলে। তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় পরিবারের খরচ চালানোর পাশাপাশি সাহেদুলের চিকিৎসার খরচে টানাপোড়ন দেখা দেয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাগলনাইয়া পৌর শহরে আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার সাথে অংশ নেয় সাহেদুল ইসলাম। সংঘর্ষ বেঁধে গেলে ছুটোছুটির সময় পড়ে যান তিনি। মাথা তুলে দাঁড়ানোর সময় চোখ, মুখ, মাথা ও বুক সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ছররা গুলি লাগে। এরপর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সাকিবের বোন ফাহিমা আক্তার(২৫) জানান, পাহাড়তলী চক্ষু হাপসাতালে অপারেশনে বাম চোখ নষ্ট হওয়ার কথা জানালেও চিকিৎসকরা গুলি বের করতে পারেননি। তার বাম চোখে এখনো দুটি গুলি রয়েছে। এছাড়া মাথায় ১৯৪টি, দুই হাতে শতাধিক, বুকে তিন-চারটা সহ তিনশতাধিক গুলি লাগে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ফাহিমা আরো জানান, দেশে তার শরীর থেকে এসব গুলি বের করতে গেলে ব্রেন নষ্ট এমনকি জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে। সাকিবের সুচিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত থাইল্যান্ড নেয়া প্রয়োজন। শুরুর দিকে সরকারিভাবে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা পেলেও ইতোমধ্যে ধারদেনা করে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা চালানো হয়েছে। বাকি চিকিৎসা কীভাবে চলবে এনিয়ে তার পরিবার দিশেহারা বলেও জানান ফাহিমা।
সাকিবের বাবা নূর আলম(৫৫) জানান, চিকিৎসা করানোর জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতায় দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে সাকিব সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলে আমরা আশা করি।