বাসস
  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫২
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:৪৭

চিকিৎসার অভাবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সিফায়েত

প্রতিবেদন : শরিফুল ইসলাম

নড়াইল, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জেলার নড়াগাতী থানার চাপাইল গ্রামের সিফায়েত চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি এখন ভালো নেই। ঠিকমত চিকিৎসা না পেয়ে ধীরেধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জানাগেছে, নড়াইলের নড়াগাতী থানার চাপাইল গ্রামের আজাদ চৌধুরী ও মিনি বেগমের ছেলে সিফায়েত চৌধুরী (২৬) গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে চলতি বছরে ডিগ্রী পাশ করেছেন। দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বোনের বাসায় যান। সেখান থেকে নবীনগরে নিয়মিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতেন। প্রতিদিনের মত গত ৫আগস্টও তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদিন পুলিশের গুলিতে আহত হন সিফায়েত চৌধুরী। রাতে ফেসবুকের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন জানতে পারে সিফায়েত গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছেন। তার বাম কানসহ মাথায় ও কাঁধে গুলি লাগে। সেখানে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। পরে সিএমএইচ’এ এক সপ্তাহ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

গত ৩০ আগস্ট বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তাকে। কিন্তুতিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। সিফাতের গরীব বাবার পক্ষে যা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

আহত সিফায়েত চৌধুরী বলেন, খুব বেশি কথা বলতে পারি না। তেমন কিছু মনেও নেই। তবে আন্দোলনে যাওয়ার কথা কেবল মনে আছে।

তিনি আরোবলেন, গত ৫ আগস্ট নবীনগরে আন্দোলনে গিয়েছিলাম। আরও অনেক লোক ছিল। আন্দোলনেপুলিশ ছররা গুলি ছোঁড়ে। পরে আর কিছুই মনে নেই আমার।

সিফায়েত চৌধুরীর বড় ভাই রুবেল চৌধুরী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। ইমামতি করে সংসার চালাই কোন রকম।

তিনি আরও বলেন, গত ৩০ আগস্ট সিএমএইচ থেকে সে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি আসে। ইতোমধ্যে সিফায়েতের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। আর্থিক সমস্যার কারণেওষুধ কিনতে পারছি না। এ বিষয়ে সরকারেরসুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সিফায়েত চৌধুরীর পিতা আজাদ চৌধুরী (৬৫) ছেলের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।

তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কোন মতে সংসার চলে। ঢাকায় ছেলের অপারেশনের পর যে ওষুধ আনা হয়েছিলো তা শেষ হয়ে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনও অনেক খারাপ। কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে সে। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরনুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে সন্তানের উন্নত চিকিৎসা করানো আমার পক্ষে সম্ভব না।

সরকারের কাছে ছেলের উন্নত চিকিৎসার জোর দাবি জানান তিনি।

চাচা ইউনুস চৌধুরী বলেন, সিফায়েত নিজে টিউশনী করে লেখাপড়া করেছে। পরিবারের আশা ছিলো ভালো একটা চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বিধি বাম। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে গুরুতর আহত হয় সিফায়েত। গুলির খবর পাওয়ার পর ঢাকা যাওয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে টাকা যোগাড় করে ওর অন্য ভাইদের সেখানে পাঠাই।

নড়াইলে কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ সিফায়েত চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাদের পক্ষে সিফায়েতের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখলে মনে হয় মানসিকভাবে ভারসম্যহীন হয়ে পড়েছে। যার কারনে এখনই তার উন্নত চিকিৎসা না করালে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

তিনি সরকার ও বিত্তবানদের কাছে সিফায়েতের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।