বাসস
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৫৬

শহিদ আলমগীরের নামে সড়কের নামকরণের দাবি তার ছেলের

প্রতিবেদন : আজাদ রুহুল আমিন 

বাগেরহাট, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) :  আলমগীর মোল্লা প্রায় আট বছর আগে ঢাকায় চলে যান। তিনি বিএনপির অত্যন্ত সাহসী কর্মী ছিলেন। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে আর জীবন জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে সপরিবারে পুত্র সন্তান স্ত্রী ও মা বাবাকে নিয়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান।

মেরুল বাড্ডায় চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাতে থাকেন আর পাশাপাশি বিএনপির সকল আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বাগেরহাট সদরের ভৈরব নদের কাছে মুনিগঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে বেমরতা ইউনিয়নের গোপাল কাঠি গ্রামের মৃত কালাম মোল্লা (৭৫ ) ও মিনারা বেগমের (৬৫) বড় সন্তান শহীদ আলমগীর মোল্লা (৪২)। পিতা ছিলেন পেশায়  কৃষক। আর তার মা গৃহিণী। তার স্ত্রী মুরশিদা বেগমও (৩০)গৃহিণী। 

শহিদ আলমগীর মোল্লার আরো চার ভাই বোন রয়েছে।  রেবা বেগম, শিউলি বেগম, শেফালী বেগম ও মামুন মোল্লা। শহিদ আলমগীর মোল্লার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে জ্যৈষ্ঠ  পুত্র মো: সাগর মোল্লা (২১)। সে ঢাকা তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু টাকার অভাবে ফরম পূরণ করতে না পারায় এইচ এস সি পরীক্ষা দিতে পারেনি। বাবা শহিদ হবার পর ইজিবাইক চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছে। দ্বিতীয় কন্যা আশা আক্তার (১৮) বিবাহিত এবং কনিষ্ঠ পুত্র রাইফ হাসান হৃদয় (৭) স্থানীয় হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

আলমগীর মোল্লা ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন আন্দোলনের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে ছিলেন সক্রিয়।  গত ৫ আগস্টও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র  আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান মিছিলে অংশ নেন। দুপুর ১২ টার দিকে মেরুল বাড্ডা থানার সামনে মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে  আলমগীর মোল্লা গুলিবিদ্ধ হন। তার কোমরের কাছে গুলি লাগে। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা মেলেনি। পরে তাকে বেসরকারি শ্যামলী সিটি কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলমগীরের শরীরে গত ৭ আগস্ট বিকেলে অস্ত্রোপচার করে দুটি বুলেট বের করেন চিকিৎসক। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত ৮ আগস্ট রাত ১২ টা ৫ মিনিটে তিনি মারা যান। পরে ভোরে এ্যাম্বুলেন্স যোগে লাশ বাগেরহাট গোপালকাঠি গ্রামে আনা হলে সৃষ্টি হয় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। সবার চোখেই ছিল অশ্রু। কী স্বজন আর কী আত্মীয়, পাড়া প্রতিবেশি। বিকেলে স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে হাজারো মুসল্লির উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শহিদ আলমগীর মোল্লাকে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়।

পরিবারটি এখনও কোন সরকারি সাহায্য পায়নি। তবে জামায়াতে ইসলামী থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, আল-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ১ লাখ টাকা ও বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওমর আলি মুন্না নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং বাগেরহাট সদরের সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিম ১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। 

এদিকে সরেজমিনে প্রতিবেদন করতে গিয়ে জানা গেছে, শহিদ আলমগীর মোল্লার স্ত্রী কনিষ্ঠ পুত্রকে সাথে নিয়ে আপাতত নেত্রকোনায় অবস্থান করছেন। 

শহিদের বোন শেফালি বেগম (২৮) জানান, তার ভাই খুবই সাহসী ছিলেন। সব সময়ই বিএনপির মিছিল মিটিংয়ে অংশ নেয়ায় বাগেরহাটের আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা তাকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। শেষপর্যন্ত তার ভাইটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহিদ হন। 

তিনি তার ভাইয়ের পরিবারের জন্যে সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

শহিদ আলমগীর মোল্লার নিকটতম প্রতিবেশী চাচা মনিরুজ্জামান (৫৫) জানান, আলমগীর দুঃসাহসী ছিলো। সে দেশের জন্যে  জীবন বিসর্জন দিয়েছে। আলমগীর খুব মানবিক ছিল। সে কারও সাথেই ঝগড়া বিবাদ করতো না।

এদিকে আলমগীর মোল্লার জ্যৈষ্ঠ পুত্র মোঃ সাগর মোল্লা সরকারের কাছে গোপালকাঠি সড়কটিকে তার বাবা শহিদ আলমগীর মোল্লার নামে নামকরণের দাবি জানায়।