বাসস
  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪০
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৫৮

আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় এএসপি’র হাতে হেনস্তার শিকার আহত সাগরের পরিবার

প্রতিবেদন : মো. মামুন ইসলাম

রংপুর, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : যে কোনো সময় পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। এ আতঙ্কের মধ্যেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ তরুণ সাহেদুল ইসলাম সাগর।

এমন দুঃসময়ে বাড়ির মালিক একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) অমানবিকভাবে সাগরের পরিবারকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন।

অন্যদিকে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে আংশিক সুস্থ হয়ে সাগর রংপুর নগরীর আলমনগর এলাকায় আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি অফিসে তার চাকুরিতে যোগ দেন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময়ের বেতন না দেয়ায় বৈষম্যের প্রতিবাদে তিনি চাকুরিও ছেড়ে দেন। 

গত ১৯ জুলাই রংপুর নগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়ার পর গলায় গুলিবিদ্ধ হন সাগর (২৭)। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (আরপিএমসিএইচ) ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই সাগর, তার স্ত্রী নুশরাত আহমেদ নিশি (২৩) এবং তাদের একমাত্র কন্যা সুবাত ইসলাম সারাহ’র (৪) সাথে এসব অপ্রত্যাশিত ও বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে।

রংপুর নগরীর আলহাজ্ব নগর এলাকায় এএসপি শরীফ আল রাজীবের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে মেয়েসহ সাগর-নিশি দম্পতি বসবাস করছিলেন।

বাসস’র সাথে আলাপকালে সাগরের স্ত্রী নিশি বলেন, তার স্বামী এখনো ঠিকমত কথা বলতে পারেন না। কথা বললে গলায় কাশি ও ব্যথা হয়।

পুলিশের গুলিতে সাগর আহত হওয়ার পর থেকে দিশেহারা নিশিকে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে হাসপাতালে স্বামীর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার চাপও নিতে হয়েছে।

অন্যদিকে গত ১০ জুলাই থেকে নিয়মিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় সাগরকে গ্রেপ্তার করতে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নিয়ে পুলিশ তাকে খুঁজছিল। একইসঙ্গে ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালা এএসপির পরিবারের সদস্যদের মানসিক নির্যাতন নিশি ও তার স্বামীকে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত করে ফেলে। নিশি তার চারপাশে কেবল অন্ধকার দেখে পাগলপ্রায় হয়ে যায়।

জুলাই অভ্যুত্থানকালে এএসপি রাজীব নাটোর জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তখন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এএসপি রাজীব কিছুসময়ের জন্য তার রংপুরের বাসায় অবস্থান করছিলেন। ওই সময়েইপুলিশের গুলিতে সাগর আহত হন। বর্তমানে রাজীব এএসপি পদে রাজবাড়ি জেলা পুলিশে কর্মরত আছেন।

সাগর হাসপাতালে ভর্তির তিনদিন পর এএসপি রাজীব তার স্ত্রীর মাধ্যমে নিশিকে একদিনের মধ্যে তাদের ভাড়া বাসা খালি করতে বলেন। এএসপির স্ত্রী নিশিকে বলেন, তার ‘সন্ত্রাসী’ স্বামী সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ ও র‌্যাব তাকে খুঁজছে। কোনো ‘সন্ত্রাসী’-কে তারা বাসায় থাকতে দেবেন না।

নিশি বারবার অনুরোধ করার পর এএসপির স্ত্রী ‘দয়াপরবশ হয়ে’ নিশিকে একদিনের জায়গায় দু’দিনের মধ্যে তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেন।

রংপুর নগরীর জুম্মা পাড়া এলাকায় তার মেয়ে সারাহকে মায়ের কাছে রেখে নিশিকে প্রতিদিন সকালে স্বামীর জন্য খাবার রান্না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হত।

নিশি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কোনভাবে দু’দিনেই সেই এএসপির বাড়ির বিপরীতে আরেকটি ভাড়া বাসায় উঠতে পেরেছিলাম।’

নিশি বলেন, ‘কিছুদিন পর, এএসপির স্ত্রী, সদ্য ভাড়া করা বাড়ির মালিককে সেখান থেকেও আমাদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেই অনুসারে, নতুন বাড়ির মালিক আমাদের বাড়ি ছাড়তে বলেন। তিনি আমাকে ভয়ে ভয়ে জানান যে এএসপির বাবা এবং মা তাকে ওই এলাকা থেকে আমাদের তাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন।’

এসময় হতাশ নিশিকে একই এলাকায় আরেকটি বাড়ি খুঁজতে এবং তার মালিককে কিছু অগ্রিম ভাড়াও পরিশোধ করতে হয়েছিল। ১৫ দিন পর ১ অক্টোবর তাদের সেখানে উঠার কথা ছিল।

নিশি বলেন, ‘কিন্তু, এএসপির নির্দেশে তার বাবা এবং মা আবারো নতুন ভাড়া করা বাড়িটির মালিককে আমাদের সেখানে থাকতে না দিতে এবং অগ্রিম বাড়ি ভাড়া ফেরত দিতে রাজি করান।’

ফলে, নতুন বাড়ির মালিক নিশিকে অগ্রিম নেয়া ভাড়া ফেরত দেন।

নিশি বলেন, ‘আমাদের মানবাধিকার ও সামাজিক মর্যাদা লঙ্ঘন করে মানসিকভাবে নির্যাতন করার জন্য আমি তখন এএসপি, তার স্ত্রী, বাবা এবং মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলাম।’

নিশি ও সাগর এই এএসপিকে ‘কোটা এএসপি’ এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগী আখ্যায়িত করে এএসপি ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে মানসিক নির্যাতনের দায়ে আইনের আওতায় আনার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ।

নগরীর শান্তিনগর খামার এলাকায় বাসস’র সাথে কথা বলার সময় সাগর, তার বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যরা জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সাগর ও তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেন।

তাদের পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাগর সবার বড়। তাদের রয়েছে মাত্র আড়াই ডেসিমেল জমির ওপর টিনের ছাদসহ বেড়া দেয়া একটি ছোট বস্তি বাড়ি।
সাগরের বাবা শফিউল ইসলাম (৫৫) একজন রিক্সাচালক। তিনি গত ৩০ বছর ধরে তার রিক্সায় গ্রাম এলাকা থেকে কাঁঠালের পাতা এনে নগরীতে বিক্রি করেন। তার দৈনিক আয় ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। সাগরের মা শাহনাজ বেগম (৪৫) একজন গৃহিণী। তার পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি গত ১২ বছর ধরে এলাকায় ছাত্রদের মেসে রান্না করে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় করেন।

সাগরের একমাত্র ছোট বোন শিরিন আক্তার শিলার (২২) বিয়ে হয়েছে। তিনি তার স্বামী সুমন ইসলাম (২৪) এর সাথে নগরীর সরেয়ারতল এলাকায় থাকেন।

২০১৯ সালে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সাগরের একমাত্র ছোট ভাই হাসান রাব্বি (২০) চরম আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। চার মাস আগে শহরের মুসলিমপাড়া এলাকার নাহিদার সঙ্গে রাব্বির বিয়ে হয়। বর্তমানে রাব্বি একটি বেসরকারি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
সাগর জানান, ছোটবেলা থেকেই তার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় মানের শিক্ষা তিনি অর্জন করতে পারেননি। ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার পড়াশোনায় দু’বছরের বিরতি দিতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এরপর প্রেমের সম্পর্কে নিশি’র সাথে আমার বিয়ে হয়। নিশি তখন এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। গৃহিণী নিশি একটি কন্যা সন্তানের মা।’

নিশির বাবা নাঈম আহমেদ রংপুর শহরের জুম্মাপাড়া এলাকার একজন ব্যবসায়ী।

১৯ জুলাইয়ের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে সাগর বলেন, সেদিন তিনি একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। তার ছোট ভাই রাব্বিকে নিয়ে বিকেল ৩টায় জেলা স্কুল মাঠ থেকে পূর্ব ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার।

এদিকে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ শহিদ হওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রংপুরেও পরিস্থিতি চরম অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

সাগর তার স্ত্রীকে জানান, তিনি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছেন।

এসময় নিশি সাগরকে বলেন, ‘ঠিক আছে। আজ মিছিলে যাবে না। তোমার একটা মেয়ে আছে, তোমার কিছু হলে তার কি হবে? নগরীর পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর।’

সাগর নিশিকে প্রশ্ন করেন, ‘আমি মিছিলে না গেলে কোটা প্রথা বিলুপ্ত করে মেধাবী তরুণরা কীভাবে চাকুরি পাবে? কীভাবে আমাদের মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে মেধার ভিত্তিতে চাকুরি পাবে?’

সাগর নিশিকে বলেছিলেন জুমার নামাজ পড়ে তিনি তার বাবার বাড়ি গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরবেন।

স্ত্রীর কাছে বিদায় নিয়ে জুমার নামাজ পড়ার পর সাগর তার বাবার বাড়িতে যান। সেখানে তার ছোট ভাই রাব্বি তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন তাদের মা সাগর ও রাব্বি দু’জনকেই শহরের পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক বলে মিছিলে অংশ নিতে নিষেধ করেন। তিনি দুই পুত্রকে তার সাথে দুপুরের খাবার খেতে বলেন। তবে তারা সেদিন দুপুরের খাবার খাননি।

সাগর বলেন, ‘মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমরা খামার মোড় পয়েন্টে গিয়ে বিকেল পৌনে তিনটায় মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম।’

মিছিলটি জেলা স্কুলের দিকে যাচ্ছিল। সিটি মার্কেট ও জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারের কাছে ওভার ব্রিজ পয়েন্টে পৌঁছানোর পর সাগর শত শত আগ্রাসী সশস্ত্র পুলিশকে দেখতে পান।

সাগর বলেন, ‘এসময় লাউডস্পিকার ব্যবহার করে আমাদের মিছিলের ছাত্ররা বারবার পুলিশকে গুলি না চালানোর জন্য অনুরোধ করছিলেন।’

এরপর রংপুর পুলিশ লাইনসের দিক থেকে জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টার, সিটি কর্পোরেশন অফিস, ওভার ব্রিজ, সিটি মার্কেট ও রাজা রাম মোহন মার্কেট এলাকায় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী সহিংসভাবে ছুটতে থাকে।

সাগর বলেন, ‘এসময় পুলিশ রাবার  বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি ছুঁড়তে থাকে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা ছাত্র-জনতার মিছিলে ছাত্র, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়।’

এসময় সাগর সিটি মার্কেট সংলগ্ন ওভার ব্রিজ এলাকায় তার আশেপাশে দু’ব্যক্তিকে পুলিশের গুলিতে মারা যেতে দেখেন।

তখন পুলিশ ও জনতার মধ্যে পুলিশের গুলি ও ইট-পাটকেল ও পাথর ছোঁড়া-ছুঁড়ির সময় সেখানে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সাগর বলেন, ‘বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ওভার ব্রিজ এলাকায় পুলিশ আমাকে লক্ষ্য করে আমার গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলি করে। আমার শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। এ সময় মিছিলে অংশ নেয়া আমার বন্ধু লালবাগ এলাকার খায়রুল ইসলাম (২৫) স্থানীয়দের সহায়তায় আমাকে উদ্ধার করে। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও খায়রুল অন্য একজনের মোটরসাইকেলে করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।সেখানে ডাক্তার, নার্স, ইন্টারনি ডাক্তার এবং কর্মীরা আমার অস্ত্রোপচারের জন্য সবকিছু দ্রুত ব্যবস্থা করেছিলেন।’

হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান এবং কান, নাক, গলা বিশেষজ্ঞ এবং হেড নেক সার্জন অধ্যাপক ডা. এ.এম. আল-রব্বানী সাগরের গলায় সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেন।

ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে সাগর বলেন, ‘পরে প্রফেসর আল-রব্বানি আমাকে বলেছিলেন যে মহান আল্লাহর রহমতে আমি ভাগ্যবান হিসেবে বেঁচে গেছি। বুলেটটি আমার গলার কণ্ঠনালীতে তির্যকভাবে ভেদ করে বেরিয়ে যায়। যদি গুলিটি ৯০-ডিগ্রি কোণে সরাসরি আমার গলায় আঘাত করত, তবে আমি হয়ত ঘটনাস্থলেই মারা যেতাম।’

নিশি বলেন, ‘প্রফেসর আল-রব্বানি আরপিএমসিএইচ-এ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে আমার স্বামীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছেন। নার্স ও ইন্টারনি ডাক্তাররাও সর্বাত্মক সহায়তা দিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’

প্রফেসর আল-রব্বানি সাগরকে নিয়মিত ওষুধ সেবনের এবং সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত চেক-আপ করার পরামর্শ দেন।

সাগর জানান, আর্থিক সংকটের কারণে তিনি এখন নিয়মিত চেক-আপ ও ওষুধ কিনে খেতে পারছেন না। তিনি অস্ত্রোপচারের জায়গার ভেতরে তীব্র চুলকানি, কাশি এবং ব্যথা অনুভব করছেন।

এদিকে ২৭ জুলাই সকাল ১০টায় অস্ত্রোপচারসহ নয় দিনের চিকিৎসা শেষে আরপিএমসিএইচ কর্তৃপক্ষ সাগরকে ছেড়ে দেয়। সাগরকে গ্রেপ্তারের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ প্রতিদিনই তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিচ্ছিল। তার ১৭ নং ওয়াার্ডের সকল নার্স ও কর্মীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ এড়াতে সাগরকে একটি পেছনের পথ দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করেন।

সাগর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকার বা অন্য কোন সংস্থা বা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোন সহায়তা পাইনি। আমার চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা ধার করতে হয়েছে।’

এএসপি দ্বারা তার এলাকা থেকে বিতাড়িত বর্তমানে বেকার সাগর ও নিশি দম্পতি নগরীর কোটপাড়া পার্কের মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

নিশি তার স্বামী সাগরকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সম্ভব হলে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সুযোগ পেলে নিশি নিজেও আবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চান।

নিশি-সাগর দম্পতি বলেন, ‘আমরা বৈষম্যমুক্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এএসপি রাজীবের বিচার চাই। আমরা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে থাকাকালীন তিনি আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলেন।’

সাগরের হতদরিদ্র বাবা শফিউল ইসলাম ও মা শাহনাজ বেগম পরিবারের কল্যাণে তার ছেলে সাগরকে আর্থিক সহায়তা ও একটি চাকরি দেয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অনুরোধ জানান।