শিরোনাম
প্রতিবেদন : জাকির হোসেন কবির
পঞ্চগড়, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : পুলিশের আগুনে পুড়ে যাওয়া ছাত্রদের লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে শহিদ হলেন সুমন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটে।
ঐদিন ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার প্রধান ফটকের সামনে মারমুখী পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে যেসকল ছাত্র শহিদ হয়েছে তাদের লাশের স্তুপে পুলিশ আগুন ধরিয়ে দেয়। এই খবর শুনে শত শত মানুষ লাশ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুমন ইসলামও বসে থাকেননি। বন্ধুকে নিয়ে লাশ উদ্ধারে যান। কিন্তু অপরদিক থেকে পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। সে গুলি এসে লাগে সুমনের মাথায়। শহিদ হন তিনি।
সেই দিন সঙ্গে থাকা সুমনের বন্ধু সোলেমান ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লাশ পোড়ানোর মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনে আমরা দু’জনে চলে যাই আশুলিয়া থানার প্রধান ফটকের সামনে। সেই সময় পুলিশ আমাদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলি ছোঁড়া করে। আমি দৌড়ে পালাতে পারলেও আমার বন্ধু সুমন পালাতে পারেনি । গুলি লাগে তার গায়ে। সে সেখানেই পড়ে যায়। পরে এসে আমি তার খোঁজ করি। কিন্তু পাইনি। পরে মোবাইলে ভিডিও দেখে জানতে পারি, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়েছে । তার লাশ ৭ই আগস্ট ঢাকা মেডিকেল থেকে উদ্ধার করা হয়।’
সোলাইমান আরো বলেন, লাশ পাওয়ার পর দেখা যায় মাথায় গুলির ক্ষতচিহ্ন। শরীরে রাবার বুলেটের অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। ৮ই আগস্ট গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয় সুমন ইসলামের লাশ।
শহিদ সুমন ইসলাম (২১) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের আমিন নগর এলাকার হামিদ আলীর ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন।
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, সুমন ইসলাম পঞ্চগড়ের সাকোয়া ফাজিল মাদ্রাসায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সুমনের বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তাই সুমন অভাবের সংসারের হাল ধরতে ও পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় ইপিজেডে কাজ নিয়েছিলেন তিন বছর আগে। সংসারের সব দায়িত্ব ছিল সুমনের। একমাত্র কর্মক্ষম সদস্যকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশাহীন।
সম্প্রতি এলাকায় নিহত সুমন ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেনবৃদ্ধ বাবা হামিদ আলী ও মা কাজলি বেগম। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম সদস্যকে হারিয়ে নির্বাক তাঁরা। নিজেদের ভিটেবাড়ির ৪ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো জায়গা জমি নেই তাঁদের। এই বৃদ্ধ বয়সে কিভাবে সংসার চলবেকপালে সেই চিন্তার ভাঁজ।
সুমনের বাবা হামিদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলে অভাবের সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় গেছে চাকরি করতে। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধহয়ে আমার ছেলে শহিদ হয়েছ। ঐদিন থেকেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার তো চলার মতো আর রাস্তা নাই। কিভাবে চলবো এই বৃদ্ধ বয়সে? সংসার চালানোর কেউ রইল না আর।’
সুমনের মা কাজলি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলো আমার ছেলে, এ আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে দেশে শান্তি চাই। আর যেন কোন মায়ের কোল খালি না হয়, এই আমাদের চাওয়া।’