বাসস
  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:৪৭
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:১২

আবু সাঈদের আত্মদানে অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন শহিদ হাসান

প্রতিবেদন : মোহাম্মদ নূর উদ্দিন

হবিগঞ্জ, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : রংপুরে আবু সাঈদের আত্মদানে অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনে যান কিশোর হাসান মিয়া। কিন্তু তিনি আর ফেরেননি। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন।

শহিদ হাসান মিয়া (১২) স্থানীয় এলআর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তার বাবা ছানু মিয়া একজন সবজি বিক্রেতা। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে হাসান ছিলেন দ্বিতীয়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট সকালে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে বৈষম্য বিরোধী স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এ সময় পুলিশও বাধা দিতে এগিয়ে আসে। এ নিয়ে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ যাত্রাপাশা গ্রামের ছানু মিয়ার ছেলে হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়। পরে তাকে স্থানীয় করবস্থানে দাফন করা হয়।

হাসান জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী শহিদ। সেই দিনের কথা মনে হলে এখনো তার সহপাঠীরা আঁৎকে ওঠে। ঘটনা এতোটাই আতংকের ছিল যে হাসানের মাথায় গুলি লাগার পরও কেউ তাকে ধরতে সাহস পায়নি। হাসান রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে পড়েছিলেন কয়েকঘন্টা।

হাসানের বাবা ছানু মিয়া (৪৩) বলেন, ‘আমার ছেলে ক্লাশ সিক্সে পড়তো। মারা যাওয়ার দিন সকাল ১০টায় এক সাথে ভাত খেয়েছিলাম। কিন্তু কে জানত এটাই ছিল বাবা ছেলের শেষ খাওয়া। নিষেধ করেও তাকে আন্দোলনে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারিনি। আমার ছেলের কোন অপরাধ ছিল না। তবু তাকে হত্যা করা হলো। বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হলো। আমরা বেলা ২টার দিকে একজন লোকের মাধ্যমে জানতে পারি হাসান মারা গেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি।’

লাশের অবস্থা এতোটাই করুণ ছিল যে সে দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো কঠিন ছিল বলে জানান হাসানের বাবা।

হাসানের মা সাজেদা আক্তার (৩৬) বাসসকে বলেন, ‘রংপুরে আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর থেকেই হাসান বলছিলো আমরা আন্দোলনে গেলে সহজেই চাকরি পাবো। আমাদের আর বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু  আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। অকালেই ঝরে গেলো তাজা একটি প্রাণ।’

তিনি আরো বলেন, আমি চাই ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক। বিচার হলে ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।

হাসানের মা এখনও ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদেন। ছেলের স্মৃতি হৃদয়ে নিয়েই বেঁচে আছেন।

তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার সারাক্ষণ বলতো কোটা পদ্ধতি বাতিল হলে আমরা বড় হয়ে সহজেই চাকরি পাবো। এখন আর কে চাকরি করবে? ছেলেই তো নেই।’

হাসানের বড় ভাই জাহিদ মিয়া বলেন, আমার ভাই আমার সাথে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। কিন্তু সে ভাল ছাত্র না হওয়ার কারণে তাকে স্কুলে আনা হয়েছিল। তবে আমার ছোটভাই হাসান একজন ভাল মানুষ ছিল।

তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অবশ্যই  আইনের আওতায় এনে সাজা দিতে হবে।

হাসান শহিদ হওয়ার পর জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার, জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ট ডা. সাখাওয়াত হাসান চৌধুরী জীবনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তার বাবা ছানু মিয়াকে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আরো ৫ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন বলে জানান ছানু মিয়া।

তবে তিনি বলেন, টাকা পেলে কি হবে? ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না।