বাসস
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২২
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩৮

ফুসফুসে গুলি নিয়ে বিপাকে রমজান, টাকার অভাবে চিকিৎসাও বন্ধ 

প্রতিবেদন : আব্বাছ হোসেন

লক্ষ্মীপুর, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫ (বাসস) : লক্ষ্মীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়েছেন অনেকেই। তারা সকলেই এখনও মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এদের মধ্যে দিনমজুর রমজান আলীও একজন। তার শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হয়েছে। তবে এখনও ফুসফুসে রয়ে গেছে আরো একটি গুলি। একদিকে চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে পরিবার চালানো। আয় রোজগার নেই। ফলে  দু’চোখেই অন্ধকার দেখছেন তিনি। 

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ বাঞ্চানগর এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী (৪৮)। তিনি গত ২০ বছর ধরে শহরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মোট ছয় সদস্যের সংসার তার। প্রতিদিন কাজ করলে মিলত ৫/৬শ টাকা। এ দিয়ে কোনরকমে চলত তার সংসার। 

গত ৪ আগস্ট সকাল বেলা ঘর থেকে কাজের সন্ধানে বের হন রমজান আলী। আর তখন সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় যেতে না যেতেই একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীদের। এতে তার বিবেক কেঁপে ওঠে। পিছু না হটে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হন রমজান। দীর্ঘ আড়াই মাস ঢাকায় চিকিৎসার পর শরীর থেকে দুইটি গুলি বের করলেও এখনো ফুসফুসের পাশে রয়েছে আরো একটি গুলি। ফুসফুসে গুলি থাকায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারছেন না তিনি। আর কাজকর্ম করতে না পারায় তীব্র আর্থিক সংকটে ভুগছেন রমজান। এ থেকে জন্ম নিয়েছে তার প্রবল হতাশা। তবে সবার সহযোগিতা পেলে আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে জামায়াত-বিএনপির পক্ষ থেকে সহযোগিতা না পেলে হয়ত আরো আগে মারা যেতাম। কিন্তু এখন আর কেউ খবর নেয় না। চিকিৎসাও চলছে না। পরিবার ও নিজের চিকিৎসা নিয়ে দু’চোখে কেবল অন্ধকার দেখছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, রমজান আলী দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করে আসছেন। তার ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনিই। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন রমজান। ফুসফুসের পাশে গুলি নিয়ে চলাফেরা করছেন। 

তার চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও শহিদ সাব্বির হোসেনের বাবা আমির হোসেন বলেন, গত ৪ আগস্ট সারাদিন দফায় দফায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যেই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে দুইশ’র বেশি শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় শহিদ হয় চার শিক্ষার্থী। আহতরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এদের অনেকের পড়ালেখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার আহতদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কাজ কর্ম করতে না পারায় বেশিরভাগ পরিবারই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। 

যেমন রমজানও শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে  এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। দরকার  সরকারি ও পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা। 

এদিকে রমজান গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন টিপুসহ জড়িতদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

পুলিশ সুপার আকতার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ২৫৯ জন আহত এবং ১৬ জন শহিদ রয়েছে। এদের মধ্যে চারজন ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরে ও ১২ জন ঢাকায় শহিদ হন। তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। 

এছাড়া জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেছেন, হতাহতের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আহতদের দেশে ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থী ও শহিদ পরিবারের পাশে রয়েছে প্রশাসন। জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসবেই।