শিরোনাম
প্রতিবেদন: মো: মজিবুর রহমান
শরীয়তপুর, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জুনায়েদ ফরাজি (অভি)। বয়স ২২ বছর। কৃষক পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। অভাব অনটনের সংসারে বেশি একটা পড়ালেখা করতে পারেননি। সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় শিশু বয়স থেকেই শ্রমিকের কাজ শুরু করতে হয়েছিল তাকে। ছোট দুই ভাই ও এক বোন অভির আয় করা টাকায় পড়ালেখা করছিল।
গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিলদেওয়ানিয়া গ্রামের শাহ আলম ফরাজির ছেলে অভি। তিনি ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় একটি কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রির দোকানে শ্রমিকের কাজ করতেন।
অভির বাবা শাহ আলম ফরাজি ও মা ডলি আক্তার। তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। অভি সবার বড়। শাহ আলম অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে স্ত্রী, সন্তান ও মায়ের ভরণপোষণ করছিলেন। অভাবের সংসার হওয়ায় অভিকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে শিশু বয়স থেকেই। এলাকার একটি বিদ্যালয়ে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। এরপর কাজের সন্ধানে গাজীপুরে চলে যান। সেখানে কয়েক বছর জুতা বিক্রির দোকানে কাজ করেন। এরপর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বরে একটি কম্পিউটারসামগ্রী বিক্রির দোকানে কাজ নেন।
অভির এক বোন জাজিরার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে, এক ভাই নবম শ্রেণিতে এবং আরেক ভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। তাদের পড়ালেখার জন্য প্রতি মাসে আট হাজার টাকা করে পাঠাতেন তিনি।
দোকানের মালিক সবুজ আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই বিকেলে মিরপুরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে চলছিল তীব্র সংঘর্ষ। পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দোকান বন্ধ করে কর্মচারীরা বাসায় ফিরছিলেন। পথে অভি গুলিবিদ্ধ হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পরই সে মারা যায়।’
ওই রাতেই তিনি অভির লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেন বলে জানান।
সম্প্রতি বিলদেওয়ানিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির এক কোণে অভিকে কবর দেওয়া হয়েছে। কবরের পাশে মা ডলি আক্তার কান্না করছেন। বসতঘরে বসে দাদি রাবেয়া বেগম নাতির জন্য দোয়া পড়ছেন।
অভির বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘ভাইয়ার পাঠানো টাকা দিয়েই আমরা তিন ভাইবোন পড়ালেখা করতাম। ভাইয়া নেই, এখন আমাদের পড়ালেখার খরচ কে জোগাবে? কি অপরাধ ছিল আমার ভাইয়ার? এই বয়সে আমার ভাইয়াকে মরতে হলো কেন?’
ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে ডলি আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন আনি, দিন খাই। আমরা তো রাজনীতি বুঝি না। তাহলে আমার বুকের ধনকে কেন জীবন দিতে হলো? কেন তারা আমার বুক খালি করল?’
অভির বাবা শাহ আলম ফরাজি বলেন, ‘আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচব? ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইব?’
নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আলেম মাদবর বলেন, ‘অভিখুব অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরেছিল। গত ১৯ জুলাই রাতে তার মরদেহ গ্রামে আনা হয়। কোনো ঝামেলা যাতে না হয়, সে জন্যে রাতেই তার দাফন শেষ করা হয়। ওর এমন মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো না।’
সাহায্য সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভির পরিবার থেকে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে দুই লাখ টাকার অনুদান ছাড়া তারা আর কোন সহযোগিতা পাননি।