বাসস
  ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪১

ব্যথার যন্ত্রণা নিয়েই জীবন কাটছে আন্দোলনে আহত সাব্বিরের

পাবনা, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী নির্যাতন দেখে বসে থাকতে পারেননি পাবনার ঈশ্বরদীর সাব্বির হোসেন। যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন নৃশংস সে ক্ষত। 

গত ১৯ জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন (২১) পুলিশের হাতে নির্মম নির্যাতন ও গুলির শিকার হন। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলেনি। এছাড়া আন্দোলন দমনে পুলিশের সহিংসতার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তার মনোজগতকেও করেছে লণ্ডভণ্ড। 

সাব্বির হোসেন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর মধ্যপাড়া (কারিগর পাড়া) গ্রামের মিজানুর রহমান মিন্টুর ছেলে।

সম্প্রতি সাব্বির হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখা শেষ করে তিনি গাজীপুরে একটি ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নি করছিলেন। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে পুলিশের নজরে পড়েন। পুলিশ যখন বাসা ও মেসে অভিযান চালিয়ে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে, তখন খবর পেয়ে সাব্বির হোসেন মামার বাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

কিন্তু পথে ছাত্র জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে এ সময়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছিল। ফলে চোখে তীব্র জ্বালাপোড়া শুরু হলে পাশের এক ছাত্রকে নিয়ে সাব্বির একটি স-মিলে আশ্রয় নেন। কিন্তু পুলিশ তাদের অবস্থান শনাক্ত করে।

সাব্বির হোসেন জানান, পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। তার পাশে থাকা ছাত্রটি ভয়ে গালমন্দ শুরু করলে পুলিশ তাকেও গুলি করতে এগিয়ে আসে। ওই মুহূর্তে সাব্বির হোসেন পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে পুলিশ ক্ষেপে যায়। এরপর পুলিশ তাকে লাথি মারে এবং বুকে আঘাত করে। অবশেষে সাব্বির হোসেন পুলিশের কাছে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানান। তবে পুলিশ তার তলপেটে গুলি করে এবং তাকে পালিয়ে যেতে বলে।

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাব্বির হোসেন অনেক কষ্টে দৌড়ে একটি বাসায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তিনি ১৯ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা নেন।

সাব্বির হোসেনের এ অভিজ্ঞতা আন্দোলনকারীদের দমন করতে পুলিশের অমানবিক আচরণের প্রমাণ। তার শরীরের ক্ষতচিহ্ন ও যন্ত্রণা এই ঘটনার নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে থাকবে।

সাব্বির বলেন, ‘আমার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পুরো শরীরজুড়ে এখনো প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। সুস্থ হতে আমার আরও চিকিৎসার প্রয়োজন।’
সাব্বির চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে এসেছেন। বর্তমানে তিনি গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সাথেই বসবাস করছেন। 

সাব্বিরের পরিবার জানিয়েছে, তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু অর্থের যোগান দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। দরকার সরকারি ও বেসরকারি  পর্যায়ে সহায়তা। 

তারা ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে সাব্বিরের এই সংগ্রাম, নিপীড়িতদের প্রতি তার সহানুভূতির মূল্যায়ন এবং সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এছাড়া পুরোপুরি সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে তার পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সরকারের পাশাপাশি মানবিক সংস্থাগুলোর প্রতিও সাহায্যের আবেদন করেছে।