শিরোনাম
প্রতিবেদন: বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মাদারীপুর শহর ছিল উত্তাল। প্রতিবাদ মুখর ছাত্র-জনতা শহরের পুরান বাজারের করাচিবিড়ি রোডে মিছিল নিয়ে যায়।
এই মিছিলেই ছিলো সোহান। ঠিক তখন মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে ছাত্রলীগ বোমা হামলা ও পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। বোমার স্প্রিন্টার ও রাবার বুলেটে আহত হন মো: সোহান (২১)। তার বাম চোখে অন্ধকার নেমে আসে। বুলেট মুখে পিঠে লেগে ক্ষত হয়ে যায় শরীর। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে পালিয়ে বেড়ায় এখান থেকে ওখানে। আতংকিত হয়ে ওঠে কে দেখে ফেলে আবার কেইবা পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগকে খবর দেয়। গ্রেফতারের ভয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে না গিয়ে সোহান লুকিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেন।
সোহানের বাবা তরকারি বিক্রেতা শাজাহান বেপারী (৫৫)। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেননি। কারণ পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে সার্চ করে যারা আন্দোলনে গিয়েছিল তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।
সোহান তিন বোন দু’ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। সামান্য বেতনে একটি প্যাথলোজি সেন্টারে কাজ করতেন সোহান। মা হালিমা খাতুন (৫০) গৃহিণী। গরীব পরিবার। ভাই-বোনদের বিয়ে হয়েছে। আলাদা সংসার। মাদারীপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নতুন মাদারীপুর এলাকায় বসবাস করেন তারা। আদরের ধন সোহানের এক চোখ ক্ষত হওয়ায় তার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। তাই উদ্বিগ্ন সোহানের পরিবার।
সোহানের বাবা শাজাহান বেপারী বলেন, ‘চোখে গুলি লাগার পর সোহানকে লুকিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা করাই। ৫ আগস্টের পর মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়। সোহানকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে তারা সোহানকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে নিতে বলেন। তারপর থেকে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।’
সোহানের বাম চোখ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানকার চিকিৎসকরা সোহানকে দুই মাস পর আবার যেতে বলেছে। তারা সোহানের চোখে অপারেশন করে আর্টিফিশিয়াল চোখ প্রতিস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন। সে আশায় সোহান দিন গুনছেন।
আহত সোহান বলেন, ‘আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। বাম চোখে কখন দেখতে পাবো জানি না। তাছাড়া শুনেছি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট থেকে নাকি আমাদের আহতদের তালিকা সরকারের কাছে গেছে। দেখি কি সাহায্য সহযোগিতা করে? এখন পর্যন্ত আমি কোন সরকারি সাহায্য পাইনি। আব্দুল মান্নান ফাউন্ডেশন থেকে সামান্য আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি।’
মাদারীপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য শিবলী মাহমুদ বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আহতদের পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন তিনি।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আহত এবং নিহতদের তালিকা করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদের জন্য সরকারি সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’