শিরোনাম
প্রতিবেদন: এ.এস.এম.নাসিম
নোয়াখালী, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে মো. আরমান হোসেন রিদয় চতুর্থ। পড়েন গ্রামের মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণিতে। ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে পরিবারকে না জানিয়ে চলে যান ঢাকায়। তারপর পুলিশের গুলিতে আহত হন। প্রথমে ঘরের গরু বিক্রি করে চিকিৎসা চালিয়েছেন। বর্তমানে টাকার অভাবে চলছে না চিকিৎসা।
আরমান হোসেন রিদয় (১৬) নোয়াখালী সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শান্তসীতা গ্রামের আক্কেল আলী মাঝি বাড়ির মো. আনাল হক ও রোকেয়া বেগমের ছেলে। তিনি স্থানীয় নন্দনপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
জানা যায়, গত ১ আগস্ট বাবা-মাকে না জানিয়ে জমানো টাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় যান আরমান।
সদরঘাটে ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় থেকে নিয়মিত আন্দোলনে যেতেন। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট বিকেলে বংশাল থানার সামনে পুলিশের টিয়ারশেলে আহত হন তিনি। এরপর গুলিবিদ্ধ হলে ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার শরীরে বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলি বের করা হয়। পরদিন ৬ আগস্ট বাড়িতে আসেন আরমান। তারপর যন্ত্রণা নিয়ে ফের ভর্তি হন হাসপাতালে। চিকিৎসা খরচ যোগাড় করতে ঘরের গরু বিক্রি করেন। সে টাকায় চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু বর্তমানে টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা।
আরমান হোসেন রিদয় বলেন, ‘আমার শরীরে তিনটা গুলি লেগেছে। দুইটা বুকে আর একটা মাথায়। বুকের গুলির স্থানে ব্যথা না লাগলেও মাথার গুলির স্থানে ব্যথা করে । পরীক্ষার খাতায় লিখতে গেলে আবার মাথায় ব্যথা অনুভব করি। থেমে থেমে লিখতে হয়। কোন কাজ করতে পারিনা। মাথা টনটন করে।
আরমানের বাবা আনাল হক বলেন, ‘আমি পাগলের মতো হয়ে আছি। আমার তিন মেয়ে,দুই ছেলে। ছোট ছেলে আরমান গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তারপর বাড়ি ফিরে আসলে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারায় হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে চিকিৎসকরা জানায়, তার মাথায় আরেকটা গুলি আছে। সেটি বের করতে ঘরের গরু ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। বর্তমানে আমার ছেলে কাত হয়ে ঘুমাতে পারে না, সারারাত ছটফট করে। আমি বিভিন্নভাবে ঋণে জর্জরিত হয়ে আছি। চিকিৎসা করাতে পারছি না।
আরমানের শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন,আরমান ও তার ছোট বোন আমাদের মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। বেশ কয়েকদিন আরমান মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিল। আরমানের বোনকে জিজ্ঞেস করলে সে তার ভাইয়ের সম্পর্কে কিছু বলত না। আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি আরমান গুলিবিদ্ধ হয়েছে।ঘরের গরু বিক্রির টাকায় চিকিৎসা নিয়েছে। তার বাবা বিভিন্নভাবে কষ্টে আছে। আরমানের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ালে তার চিকিৎসা শেষ করা যেতো।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হাসিব আহমেদ বলেন, ‘আরমান সাহসী ছেলে। সেদিন সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তবে তার চিকিৎসার জন্য ঘরের গরু বিক্রি করতে হয়েছে, এটা খুবই কষ্টদায়ক। আমরা তার জন্য কি করা যায় তা অন্যদের সাথে আলাপ করবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
এবিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা বলেন, আমার কাছে বিষয়টা জানা ছিল না। জানতে পারলে সহযোগিতা করতাম। তবে এখনো তাকে সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। তার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তারপর ভেরিফাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তার চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।