বাসস
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০১

পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কাজে লেগে যেতে চান আহত মিনহাজ

প্রতিবেদন: মোঃ কায়েস উদ্দিন 

নওগাঁ, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস): গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন একপর্যায়ে রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আগস্টে দুর্বার গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারত চলে যান।

এই গণঅভ্যুত্থানেই আহত হন মোঃ মিনহাজ মন্ডল। ছয় মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হাতে এখনো কোন কাজ করতে পারছেন না। কোন অনভূতি নেই হাতে।

মিনহাজের দরকার আরও উন্নত চিকিৎসা। আর এ জন্যে প্রয়োজন হলো অর্থনৈতিক সহায়তা।

মোঃ মিনহাজ (৩৫) জেলার আত্রাই উপজেলার জয়সারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ঐ গ্রামের কৃষক মেঃ কাজেম মন্ডল ও মালেকা বিবির একমাত্র পুত্র সন্তান। আর্থিক অনটনে তেমন পড়াশুনা করতে পারেননি। 

মিনহাজের চার বোন। তারা হলেন মোসাঃ শাহনাজ খাতুন, মোসাঃ রোমা খাতুন, মোসাঃ সোমা খাতুন এবং মোসাঃ ইতি খাতুন। 

মিনহাজ স্থানীয় আত্রাই উপজেলা সদরে ছাত্র-জনতার আন্দোলন অংশ নিতেন নিয়মিত। গত ৫ আগস্ট বেলা ২টায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন তিনি।

হামলাকারীদের ছোঁড়া ইট পাটকেল ও থাই গ্লাসের টুকরা লেগে ডান হাতের বিভিন্ন জায়গা কেটে যায়। মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে প্রথমে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কেটে যাওয়া ৩টি স্থানে অনেকগুলো সেলাই দিতে হয়।

তবে মিনহাজ চিকিৎসকদের অবহেলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত তিনি রগে আঘাত পেলেও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে হাড়ের। 

বর্তমানে মিনহাজের ডান হাতে কোন অনুভূতি নাই। কোন কাজ করতে পারছেন না। ফলে বেকার হয়ে বসে আছেন। ঘরে অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী। মা বাবার দায়িত্বও তার ঘাড়ে।

জীবিকার তাগিদে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এই অবস্থায় বিদেশ যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আর্থিক সংকটে ভুগছে পুরো পরিবার। বাবা কৃষিকাজ করেই এতোদিন তার চিকিৎসার খরচ চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু আর পারছেন না। মিনহাজের উন্নত চিকিৎসার জন্যে দরকার অর্থ। কিন্তু এ অর্থের যোগান দেবে কে জানে না তার পরিবার।

আর্থিক সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে মিনহাজ জানান, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ১০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় ইউএনও তার তহবিল থেকে আরও ২ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। 

আহত মিনহাজের বাবা মোঃ কাজেম মন্ডল এবং মা মালেকা খাতুন বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশ ফ্যাসীবাদ মুক্ত হওয়ায় আনন্দিত।এই আন্দোলনে তাদের একমাত্র পুত্র মিনহাজের অংশগ্রহণকে গর্বের সাথে উপলব্ধি করেন তারা। তবে ছেলে আহত হয়ে ঘরে পড়ে থাকায় দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

তারা জুলাই আগস্টে গণহত্যার দায়ে পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। মিনহাজ যেহেতু তাঁদের একমাত্র সন্তান এবং সংসারের হাল ধরার একমাত্র অবলম্বন সে কারণে তার জন্যে একটা চাকুরিরও প্রত্যাশা করেছেন। 

মিনহাজের আপন চাচা মোঃ রিয়াজ উদ্দিন একইভাবে বলেছেন, স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে তাঁর ভাতিজা’র এই ত্যাগ জাতি স্মরণ করবে। 

তিনিও সংসারের সচ্ছলতার জন্যে মিনহাজের একটা কর্মসংস্থান করে দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

মিনহাজ নিজেও চান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উপার্জনের কাজে লেগে যেতে।