বাসস
  ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:২২
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪৫

‘আমার নিষ্পাপ পুলাডারে ক্যান গুলি করে মারল?’ শহিদ তনয়ের মায়ের করুণ আর্তনাদ

শহিদ তনয় দাসের ছবি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মা সবিতা রাণি দাস- ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : সাইফুল মালেক চৌধুরী 

কিশোরগঞ্জ, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আমার স্বপ্নরে খুন করছে, কি দোষ ছিলো আমার তনয়ের? আমার নিষ্পাপ পুলাডারে (ছেলে) ক্যান গুলি করে মারল? এর বিচার কি আমি পামু? আমি এহন কি নিয়ে থাহুম? 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ তনয় দাসের ছবি বুকে নিয়ে এভাবেই আর্তনাদ করছেন মা সবিতা রাণি দাস।

গত বছরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২১ জুলাই শুক্রবার গাজীপুর বোর্ড বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন কলেজ পড়ুয়া তনয় দাস (২০)। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তনয়। সংসারের অভাব মেটাতে গাজীপুর বোর্ড বাজারে সেলুনে কাজ করতেন।

গত ২১ জুলাই প্রতিদিনের মতো সকালে খোলা হয় সেলুন। বিকেলে আন্দোলন শুরু হলে দোকান বন্ধ করে তনয়সহ অন্যরা বাসায় চলে যান। সন্ধ্যার দিকে বন্ধুরা মিলে বের হন, রাত ৯টার দিকে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোঁড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন তনয় দাস।

এ সময়, তাঁর সঙ্গীরা উদ্ধার তাকে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাত সাড়ে ১০টায় তনয় দাসের মৃত্যু হয়।

কিশোরগঞ্জের হাওর বেষ্টিত অষ্টগ্রাম উপজেলা বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের ভাটিরনগর গ্রামের হরিকান্ত দাস ও সবিতা রানী দাসের ছেলে তনয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত তনয় দাস অষ্টগ্রাম সরকারি রোটারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে, কুলিয়ারচর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। কিন্তু পরিবারের অভাব দূর করতে প্রায় তিন মাস আগে বোর্ড বাজারে একটি সেলুনে কাজ শুরু করেন। পরিবার দেখছিল কিছু আশার আলো। কারণ কিছু টাকা পাঠাতে শুরু করেন তনয়। এতে বাবা মায়ের মন আপ্লুত হয়ে ওঠে। তারা ভেবেছিলেন, এবার বুঝি আঁধার কাটল। কিন্তু বিধি বাম। তাদের চোখের আনন্দ আলো এভাবে যে হারিয়ে যাবে তারা তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি।

মৎস্যজীবী হরিকান্ত দাস ও সবিতা দাসের সংসারে নিত্যদিনের অভাব। হরিকান্ত হাওরে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন। তাতে কতোটুকুই বা আর আয় হয়? তনয় নেই। তাই নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা থেকে তাদের মুক্তি মেলারও সম্ভাবনা নেই। 

এদিকে একমাত্র এ ছেলের জন্মের আগে আরও দুই সন্তান মারা যায় তাদের। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মা সবিতা এখন পাগল প্রায়। এছাড়া সন্তান ছাড়া ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন এই দম্পতি।
তনয়ের কাকার ছেলে কৃপা সিন্ধু দাস (৩৬) বলেন, ‘তনয় অনেক ভালো ছেলে ছিলো। সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে মিশতো। আমার কাকা তাদের একমাত্র সম্বল তনয়কে হারিয়ে এখন নিঃস্ব। কোন রকম টেনেটুনে চলছে তাদের সংসার।’

তনয়ের পিতা হরিকান্ত দাস বলেন, ‘পোলাডারে লেখাপড়া করাইতে চাইছিলাম, পারলাম না অভাবের কারণে। অভাবের তাড়নায় শেষপর্যন্ত কাজ করতে গাজিপুর গেছিল। এটাই কাল হবে কে জানতো। এখনতো পোলাডাই আমার নাই হয়ে গেলো। ভগবান ওরে নিয়া গেলো।’

তনয় শহিদ হওয়ার পর বিএনপি ও জামায়েতে ইসলামীর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। 

তনয়ের প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ দিলশাদ জাহান বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই আগস্টে নিহত সকল শহিদকে সহায়তার আওতায় হচ্ছে। খুব শীঘ্রই শহিদ তনয়ের পরিবারও এই সহায়তা পাবে।’