বাসস
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৩

শহিদ বোরহানের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের কর্মসংস্থানের দাবি তার পরিবারের

শহিদ আবদুল গণি বোরহান -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন:  মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন

ফেনী, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): আবদুল গণি বোরহান, বয়স ৩২ বছর। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামের প্রয়াত মাস্টার আহসান উল্যাহ ও নুর নাহারের ছেলে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। কুমিল্লা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করে রাজধানীতে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে চাকুরি নেন। 

একই উপজেলার চরছান্দিয়া ভূঞা বাজার সংলগ্ন এলাকায় সেলিম ভূঞা-বিবি হাজেরা দম্পতির মেয়ে আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করেন ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। শুরু হয় সুখের স্বপ্ন বুনন। আয়েশা সোনাগাজী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল (ডিগ্রী) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কথা ছিল ২০২৫ সালে আয়েশাকে রাজধানীতে নিজের কাছে নিয়ে রাখবেন। কিন্তু সেই কথা রাখতে পারেননি বোরহান। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সাথে অংশ নেন। গণঅভ্যুত্থানের ঠিক আগেরদিন ৪ আগস্ট বিকালে পুলিশ ও পতিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহিদ হন বোরহান।

আয়েশা জানান, রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় মিছিলে ছিলেন বোরহান। তখন একের পর এক গুলিতে তিনি রাজপথে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে কল পেয়ে বড় ভাই মহসিন ছুটে যান হাসপাতালে। আয়েশা তখন বাবার বাড়ি ছিলেন। 

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, বছর না পেরুতেই আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো। বোরহানের মা-বাবাও নেই। এখন আমার ঠিকানা ঘুরেফিরে বাবার বাড়ি। বোরহানের নিথর দেহ ৫ আগস্ট রাতে নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়িতে। এখানে রাত ৯টার দিকে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। 

আয়েশা আরো বলেন, যখন আশপাশে চলছিল বিজয় উল্লাস তখন বোরহানের বাড়িতে ছিল শোকের মাতম।

তিনি আরো বলেন, তাঁর দুই চোখে এখন কেবলই অন্ধকার। অজানা ভবিষ্যত নিয়ে শংকায় দিন কাটাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও পেয়েছেন অনুদানের টাকা।

আয়েশার মতে, শুধু অনুদান নয়, বোরহান সহ সব শহিদের স্মৃতিকে অমলিন রাখতে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

বড় ভাই আমানত উল্যাহ বলেন, একসপ্তাহ আগে ভাই বোরহান বাড়ি থেকে রাজধানী ফিরে যান। সপ্তাহ ঘুরতেই ফিরে আসেন কফিন বন্দী হয়ে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে শহিদ হয়ে তিনি শুধু পরিবার নয়, দেশবাসীকেও সম্মানিত করেছেন। তাই শহিদদের প্রতি এ ঋণ শোধে দেশবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট রাতে সোনাগাজী ছাবের পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার সময় স্থানীয় জনতা দাবি জানিয়েছিল ওই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনকে বোরহানের নামে নামকরণের জন্য। এছাড়া সোনাগাজী পৌর শহরের জিরোপয়েন্টকে ‘বোরহান চত্ত্বর’ নামকরণেরও দাবি তোলা হয়।

তিনি জানান, বোরহানের হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে দেরি হওয়ায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই তিনি অথবা তার ভাই মহসিন বাদি হয়ে মামলা করবেন। তিনি বোরহান সহ সব শহিদের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। 

ছাড়া তিনি শহিদ বোরহানের স্ত্রী আয়েশা আক্তারের কর্মসংস্থানে সরকারি উদ্যোগেরও দাবি জানান।