বাসস
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:১০

৫ মাস পর শহীদ হাসানের লাশ শনাক্ত : সন্তান হত্যার বিচার চান শোকাহত পিতা

শহীদ মো. হাসান - ছবি : বাসস

প্রতিবেদন: মাহমুদুল হাসান রাজু

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ‘আমার ছেলে সেদিন বেলা ১টার দিকে আমাকে ফোন করেছিল। সে কেমন আছে এবং এলাকায় কী হচ্ছে জানতে উৎসুক ছিলাম আমি। তাই তাড়াহুড়া করে ফোনটি রিসিভও করেছিলাম। কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তার কোনও কথা বুঝতে পারিনি।’ এই প্রতিবেদকের সাথে এসব কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মো. মনির হোসেন।

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের কালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে তার প্রিয় ছেলেকে হারানো পিতা কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, ‘আমি আমার ছেলের সাথে শেষ কথা বলতে পারিনি।’
 
জেলার ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মো. মনির হোসেন (৫২) অবশেষে আজ তার ছেলে মো. হাসানকে (১৯) দেখতে পাবেন। কিন্তু তার ছেলের শেষ কথা বুঝতে না পারার আক্ষেপ তার চিরদিন থেকে যাবে। হাসানের পরিবার সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে তার লাশ খুঁজে পেয়েছে।

শোকাহত পিতা বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্ট থেকে তাকে খুঁজছিলাম। আমরা প্রায় সব হাসপাতাল, ক্লিনিক, কবরস্থান, আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামসহ আমাদের পক্ষ সম্ভব সব জায়গায় গিয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পাইনি। তারপর ১১ বা ১২ জানুয়ারি আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লোকজনের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে যাই এবং পাঞ্জাবি, পায়জামা ও জাঙ্গিয়া দেখে আমার ছেলেকে শনাক্ত করি।’

৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যেখানে মো. হাসান থাকতেন সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার লাশ অন্যান্যদের সাথে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছিল। লাশ শনাক্ত ও খুঁজে পাওয়ার জন্য পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানেই মরদেহ রাখা ছিল।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিশেষ সেলের সম্পাদক হাসান এনাম বলেন, ‘আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর শহীদ হাসানের বাবা ক্রস-ম্যাচিংয়ের জন্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন। এক মাস পর ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএনএ ক্রস-ম্যাচিংয়ের ফলাফল পজিটিভ আসে।’

১০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মর্গে হাসান এবং আরও পাঁচ শহীদের বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করে এনাম এবং তার সঙ্গীরা।

মো. মনির হোসেন বলেন, ‘চার সন্তানের মধ্যে হাসান ছিল আমার দ্বিতীয় সন্তান। সে আমার বড় মেয়ের পরিবারের সাথে যাত্রাবাড়ী সুতি খাল পাড় মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করত। আর কাপ্তানবাজার এলাকার একটি ইলেক্ট্র্রনিক্স সামগ্রীর দোকানে কাজ করত। আমার পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে সে ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হৃদরোগের কারণে আমি কাজ করতে পারি না বা উপার্জন করতে পারি না। হাসান তার স্কুলপড়ুয়া ভাই এবং মাদ্রাসাপড়ুয়া বোনের পড়াশোনার সব খরচ বহন করত। এখন আমার পরিবারের ভরণপোষণের কোনও উৎস নেই, কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

শোকার্ত পিতা বলেন, তারা হাসানকে ভোলায় তাদের গ্রামেই দাফন করবেন। তিনি তার ছেলের হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

মো. মনির হোসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যদের হাসানের মৃতদেহ খুঁেজ বের করে তাদের কাছে হস্তান্তরে সহায়তা করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলে যাননি। তিনি এই প্রতিবেদক এবং তার মতো অন্যান্যদেরও ঢামেক হাসপাতালের মর্গে শহীদদের বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।