শিরোনাম
প্রতিবেদন : এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ২৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে দু'পায়েই গুলি লেগেছিল মো. বেল্লাল ইসলামের (২০)। সেই গুলি বের করা হলেও এখনও হাঁটতে পারেন না তিনি। অভাবের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো দূরে থাক, ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। ফলে পঙ্গুত্বের শঙ্কায় দিন কাটছে বেল্লালের।
বেল্লালের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া গ্রামে। বেল্লালের বাবা মো. আলাউদ্দিন গাজী, পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। মা সোসাম্মৎ নাজমা বেগম (৪৫) গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বেল্লাল ছোট।
বেল্লালের বাড়িতে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-প্রতিনিধির সাথে কথা হয় তার মা নাজমা বেগমের। কান্নাজড়িত কন্ঠে নাজমা বেগম বলেন, আমার একটাই ছেলে। আজ সেই ছেলেটাই গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হওয়ার পথে। আমি বেল্লালকে নিয় বাকি জীবনটা কিভাবে কাটাব সেই চিন্তায় দিনপার করতেছি। অভাবের সংসারে আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো।
তিনি জানান, ২০২২ সালে এইচএসসি পাসের পর আর্থিক অনটনে স্নাতকে (বিএ) ভর্তি হয়নি বেল্লাল। তবে উচ্চশিক্ষার আশায় ছয় মাস আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। ছোটখাটো কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড়ের পাশাপাশি পরিবারের আয়ের সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। রামপুরা টেলিভিশন ভবন এলাকার একটি নার্সিং হোমে চাকরি করছিলেন বেল্লাল।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বাসসকে বেল্লাল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ছাত্রদের ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সবশেষ গণ-অভ্ত্থুানের দিন, ৫ আগস্ট (সোমবার) সকালে প্রগতি সরণির মেরুলবাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টা দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার দু'পায়ে গুলি লাগে।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন তাকে আফতাবনগরের নাগরিক স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে সেখানে রোগীর ভিড়ে জায়গা পাননি বেল্লাল। রাখা হয় একই এলাকার প্রাইভেট ক্লিনিকে।
খবর পেয়ে দু'দিন পরে সেখানে ছুটে যান বড় বোন আঁখি আক্তার। এরপর রাজধানীর বাসাবো এলাকার মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে তার পায়ের গুলি বের করা হয় । গত ৯ আগস্ট তারা গ্রামের বাড়ি চলে আসেন।
আহত বেল্লাল জানান, ডান পায়ের হাঁটুর নিচে বন্ধুকের গুলি ও বাঁ পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশে ছররা গুলি লেগেছে। তিনি বলেন, ওষুধ কিনতেও তার বাবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডান পায়ে যে গুলি লেগেছে, তা রাবার বুলেট কিংবা ছররা গুলি নয়। এ কারণে তার এখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি দুশ্চিন্তা নিয়ে বলেন, ‘ভয় হয়। পঙ্গু হয়ে গেলে চলমু কেমনে? দেখবে কে? বাবা নিজেও তো অসুস্থ। আর আমি তো তাদের একমাত্র ছেলে। তাদেরই বা কী হবে? এসব ভাবলে আমার ঘুম আসে না। অথচ নিজের উন্নত চিকিৎসাও হচ্ছে না।’
বেল্লালের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘অর গুলি লাগোনের কথা হুইনা যেন আসমান ভাইঙ্গা মাথায় পড়ছে। অভাবের সংসার, ওর বাপ আর আমিও অসুস্থ। বিছানায় ব্যথায় কাতরাচ্ছে পোলাডায়। এ্যাহন অরে ভালো চিকিৎসা করানোর কোনো টাহা-পয়সা আমাগো হাতে নাই। খুব খারাপ হালে আছি মোরা।’
নাজমা বেগম আরও জানান, আহত হওয়ার পরে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ অর্থনৈতিক সহায়তা করেছেন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন সামান্য পরিমান সহায়তা করেছেন।
সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন তারা যেন আমার ছেলেটির দায়িত্ব নেন। ওর যেন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
একমাত্র আহত ছেলের জন্য সরকারের কাছে একটি সরকারি চাকরির আবেদন জানিয়ে বেল্লালের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলেটির জন্য একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমরা বাকি জীবনটা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারতাম। সরকার যেন আমাদের অনুরোধটি বিবেচনা করে।