বাসস
  ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৭
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৯

উন্নত চিকিৎসার অভাবে বাম হাত অবশ হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে জুলাই যোদ্ধা সোহানের

আহত মো. সোহান বিশ্বাস -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : সুলতান মাহমুদ

নড়াইল, ৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : অভাবের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারায় বাঁ হাত চিরতরে অবশ হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ রাজমিস্ত্রী সোহান বিশ্বাসের।

দিনটি ছিলো ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। ঠিক দুপুর ১টা ৩০ মিনিট। নড়াইল সদর উপজেলার মালিবাগ ও নাকশি-মাদ্রাসা এলাকায় চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার প্রচণ্ড বিক্ষোভ।

এই বিক্ষোভে স্বতর্স্ফূতভাবে অংশ নিয়েছিলেন সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো. মতিয়ার রহমানের ছেলে রাজমিস্ত্রী মো. সোহান বিশ্বাস(২৯)।

সেদিন মৃত্যু কবুল করেই দেশের জন্য রাজপথে নেমেছিলেন তিনি। মৃত্যু হয়নি বটে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের ও পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত হন। আজও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন বুলেট আর আঘাতের ক্ষতচিহ্ন।

সর্বশেষ ৬ এপ্রিল রোববার নড়াইল সদর হাসপাতালে অপারেশন কওে তার শরীর থেকে একটি ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে এখনও তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আরও গুলি রয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে ঘটনার দুই মাস পর ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে তার বাঁ হাতে অপারেশন করা হয়। কিন্তু এখনও হাতের অবশভাব কাটেনি। হাতে কোনো বল ফিরে পাননি তিনি।

অভাবের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো দূরে থাক, ওষুধ কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার। ফলে বাঁ হাত চিরতরে অবশ হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে রাজমিস্ত্রী সোহানের।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বাসসকে সোহান বিশ্বাস বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।

ছাত্র-জনতার ডাকা কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। সবশেষ ৪ আগস্ট দুপুরে নাকশি-মাদ্রাসা এলাকায় অবস্থিত তেল পাম্পের সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার বাম হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় পুরো শরীর।

এ সময় উপস্থিত কয়েকজন তাকে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

পরবর্তীতে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে ২মাস ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন। এখানেই বাম হাতে অপারেশন করা হয়।

সোহান জানান, বাঁ হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছররা গুলি লেগেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে কাজে যেতে না পারায় তার আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। স্ত্রী, একছেলে, বাবা-মাসহ ছয়ভাই বোনের সংসারে অভাব অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

তিনি বলেন, ওষুধ কিনতেও তার অসুস্থ্য বাবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক সোহান আরও জানান, সহযোগিতা হিসেবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছেন। আর কোথাও থেকে সহযোগিতা পাননি।  

তিনি দুশ্চিন্তা নিয়ে বলেন, ‘ভয় হয়। হাত কিংবা শরীর অবশ হয়ে গেলে চলবো কেমনে? দেখবে কে? বাবা নিজেও তো অসুস্থ। এসব ভাবলে আমার ঘুম আসে না। অথচ নিজের উন্নত চিকিৎসাও হচ্ছে না।’ 

রাষ্ট্র্রের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই তার। ৫ আগস্টের পর থেকে সরকার যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে তাতেই সোহান সন্তুষ্ট। তবে তার উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সোহানের চাচা নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি বিএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমার ভাইপোর জন্য উন্নত চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, যারা আমার ছেলেকে গুলি করছে তাদের বিচার চাই। একইসাথে আমার ভাইপোর ভবিষ্যতের জন্য সরকার যেন একটা ব্যবস্থা করে দেয় সেই অনুরোধ করছি।

সরকার যেন আমাদের অনুরোধটি বিবেচনা করে।