শিরোনাম
প্রতিবেদন : এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের মরহুম আবদুল মন্নান হাওলাদারের পুত্র মো. জাকির হোসেন। তিনি গত বছরের ২৪ জুলাই রাজধানী ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিতসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
শহীদ জাকিরের স্ত্রী সালমা বেগম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর প্রতিবেদকের কাছে তার স্বামীর শহীদ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ।
সালমা বেগম ( ২৮) বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তিনি আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রায়েরবাগ শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ জুলাই মারা যান। তার পেটে গুলি লেগেছিল।
কান্নারত অবস্থায় সালমা বলেন, '১৯ জুলাই আমার কাছে ফোন আসে। রিসিভ করলে বলা হয়, 'তোমার স্বামী গুলি খাইছে।' পরে ফোনে বলা ঠিকানায় বড় ভাইকে পাঠাই। সে যাওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ফেরত দিয়েছে।'
'আমি তখন গ্রামে। এই খবর শোনার পরে আমি পাগলের মতো ঢাকা যেতে চাইছি। কিন্তু গাড়ি চলে না বলে তখনই যেতে পারেনি। পরের দিন আমি আর মেয়ে বরিশাল যাচ্ছিলাম বাসে করে। তখন পুলিশ মাঝপথে বাস আটকে দেয়। তারা ঢাকা যেতে দেবে না।'
'পরে ঢাকা গেলাম ভেঙে ভেঙে। ঢামেক হাসপাতালে যাওয়ার পরে আমার স্বামী আমাকে বলেন, 'তুমি আইছ? বলেই কান্না করে দেন। এরপর আমার মেয়েকে টেনে কোলের ধারে নিয়েছে। শেষে গুলি লাগার তিন দিন পরে আমার স্বামী মারা যান।'
সালমা বলেন, 'মারা যাওয়ার পরে আমাদের দশমিনার বাড়িতে নিয়ে আসি। লাশ আনতে বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্টে বাড়ি পর্যন্ত আনতে পেরেছি। পরে আমার স্বামীকে মাইছাখালীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।'
স্বামী হত্যার বিচার চায় সালমা
সালমা বলেন, 'আমার স্বামী যেভাবেই মারা যাক তিনি গুলি খেয়ে মারা গেছেন। স্বৈরাচার হাসিনার দলের লোক হোক বা পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী হোক, তারা গুলি করেছে। আমার স্বামী যে খুন হয়েছেন এটাই আমার কাছে বড় সত্য।'
সালমা বলেন, 'আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। মামলা করিনি কিন্তু করব। তারা কেনো আমার স্বামীকে খুন করল? আমার স্বামীর দোষটা কী ছিল?'
আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তি
শহীদের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম ২ লাখ টাকা প্রদান করেছে। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আর জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। তারা বলছে- পরে আরও টাকা দেবে।
সরকারের কাছে শহীদের স্ত্রীর চাওয়া
শহীদের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, 'আমি সরকারের কাছে স্থায়ীভাবে কিছু করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সবাই এই যে হেল্প করতেছে তা আজ আছে কাল নেই। কিন্তু স্থায়ী কিছু করে দিলে আমি সারাজীবন আমার মেয়েটাকে নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারব।'
'সেটা হতে পারে কোনো সরকারি চাকরি অথবা ফিক্সড কিছু। এটা করে দিলে মেয়েকে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ দিতে পারব বলে আশা করছি,' বলেন সালমা বেগম।
শহীদ জাকিরের মেয়ের চাওয়া
অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া জিদনি আক্তার (১৩) বলেন, 'আমার আব্বার কথা আমার অনেক মনে পড়ে। আব্বা আমাকে অনেক আদর করতেন। বাজার থেকে মজার মজার খাবার এনে দিতেন। আমার সাথে গল্প করতেন।' একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জিদনি।
জিদনি বলেন, 'আগে ঢাকা থেকে ফোন করে আমাকে আম্মু বলে ডাক দিতেন আব্বা। এখন আর কেউ আমাকে আম্মু বলে ডাকে না। আদর করে না। আমার আব্বার খুনিদের বিচাই, একটাই সাজা চাই, সেটি হলো ফাঁসি।'
শহীদ জাকিরের ছোট ভাইয়ের চাওয়া
মো. ইমাম হোসেন (২৯) বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে তদন্ত করে বিচার যেন করা হয়। আর সরকারের কাছে আমার চাওয়া হলো- আমার ভাইয়ের সংসারটা যেন ভালোভাবে চলতে পারে সেজন্য আমার ভাবী আর ভাতিজিকে যেন একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।