বাসস
  ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩২
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৬

পর্যটকদের পদভারে মুখর পাহাড়ি কন্যা রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু। ছবি : বাসস

|| মনসুর আহম্মেদ ||

রাঙ্গামাটি, ১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পাহাড়, লেক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোলে বৈচিত্র সংস্কৃতির বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির বসবাসরত পাহাড়ি কন্যা পর্যটন শহর রাঙ্গামাটি এখন পর্যটকদের পদভারে মুখরিত।

রাঙ্গামাটির হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন রিসোর্টে  প্রায় শতভাগই বর্তমানে বুকিং রয়েছে বলে জানিয়ছেন হোটেল মোটেল মালিকরা। শুধু রাঙ্গামাটি নয় জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মেঘের রাজ্য সাজেকও এখন পর্যটকের আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

শীতের শুরু থেকেই পাহাড়ে পর্যটকদের আগমন শুরু হলেও ২০২৪ কে বিদায় এবং শান্তি, সমৃদ্ধির পাহাড়ী জনপদে নতুন পর্যটক সম্ভাবনায় ২০২৫কে বরণ করে নিতে রাঙ্গামটিতে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। সাজেক ছাড়া জেলার কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, রাজস্থলীর উপজেলা সংলগ্ন সীমান্ত সড়কসহ বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলা শহরের পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ, পুলিশ বিভাগ পরিচালিত সুখী নীলগঞ্জ ও পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো, কাপ্তাই পড হাউজ, নানিয়ার উপজেলার বুড়িঘাটের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতিসৌধ, রাজবন বিহার, কাপ্তাই লেক, শুভলং ঝর্ণা, রাঙ্গা দ্বীপ, পেদা টিং টিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ, বার্গী লেক, ডিভাইন রিসোর্ট, বেড়াইন্ন্যাসহ কাপ্তাই লেকের পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে এখন পর্যটকদের ভিড়। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটগুলোতে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা পাহাড়ের নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন মনের আনন্দে। বিভিন্ন কারণে ঝিমিয়ে পড়া পাহাড়ের পর্যটন শিল্প মানুষের আগমনে চাঙ্গা হয়ে উঠায় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ভেজায় খুশি।

চট্টগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা স্কুল শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম বাসসকে জানান, রাঙ্গামাটি জেলার সাজেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে আমরা অভিভূত। প্রাকৃতিক পরিবেশে হ্রদ পাহাড়ের মিলনে পাহাড় আরও রঙিন হয়ে উঠেছে। তবে পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলোকে আরও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক ইয়াছমিন চৌধুরী বাসসকে জানিয়েছেন, পাহাড়ের সৌন্দর্য্য সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামও একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই লেক এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য্যকে পরিকল্পিতভাবে যদি সমন্বয় করে পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশ বিদেশের পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষিত করবে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ক্যাচিং মারমা বাসসকে জানান, রাঙ্গামাটিতে এখন পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে ৯০-৯৫ ভাগ রুমই বুকিং রয়েছে বলে জানান তিনি। শুধুমাত্র বিগত ডিসেম্বর মাসেই পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারণা করছেন এই কর্মকর্তা।

পর্যটকের আগমন বাড়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরাও খুশি। পর্যটন কমপ্লেক্স বোট ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী জানান, পর্যটকের আগমন বৃদ্ধিতে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব বোটই প্রতিদিন ভাড়ায় যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাঙ্গামাটি পর্যটন এলাকার পাহাড়ি তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী সোনালী চাকমা জানান, রাঙ্গামাটিতে পর্যটকের আগমন বাড়ায় আগের চেয়ে আমাদের ব্যবসা অনেক ভালো চলছে। প্রতিদিনই তার দোকান থেকে পর্যটকেরা  পাহাড়ী তাঁতের বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনছেন।

পাহাড়ে আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে বলে জানান রাঙ্গামাটি জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার নিহাদ আদনান তাইয়ান। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটিতে বর্তমানে পর্যটকের আগমন অনেক বেড়েছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে যত রকম সহায়তা প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছি।’ শহর ছাড়াও কাপ্তাই হ্রদের নদী পথেও ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেশি পর্যটক এসেছেন এবং জেলা শহরের আবাসিক হোটেল রুমগুলোর প্রায় শতভাগ বুকিং রয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন স্পটসহ সাজেকের প্রায় ১১২টি রিসোর্ট-কটেজের মধ্যে প্রায় সবগুলো রিসোর্টই শতভাগ পর্যটক এসে অবস্থান করছেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশে পরিকল্পিতভাবে সরকারিভাবে আরও নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তোলাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া গেলে পর্যটন খাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকেই অনেক রাজস্ব আদায় সম্ভব বলে মনে করেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।

যেসব পর্যটক রাঙ্গামাটিতে নতুন ঘুরতে আসবেন, তাদের জন্য কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কেউ যদি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাঙ্গামাটিতে আসেন, তাদেরকে  প্রত্যেকটি বাস কাউন্টারে টিকিট কেটে আসা যাবে। আবার চট্টগ্রাম থেকে আসতে চাইলে চট্টগ্রাম অক্সিজেন এলাকা থেকে বিআরটিসি বাস, পাহাড়িকা বাসসহ বিভিন্ন বাস রয়েছে। সরাসরি সিএনজি টেক্সিযোগেও পর্যটন শহর রাঙ্গামাটিতে আসা যাবে। আবার যারা মেঘের রাজ্য সাজেক যাবেন তারা খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রাঙ্গামাটি এসে কাপ্তাই হ্রদে ঘোরার জন্য শহরের ফিসারী ঘাট, পর্যটন এলাকা, রিজার্ভ বাজার, উন্নয়ন বোর্ড ঘাট থেকেও কান্ট্রি বোট বা স্পিড বোট ভাড়া করে নিয়ে যেতে পারবেন। এখান থেকে জেলার কাপ্তাই উপজেলা, বিলাইছড়ি, সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাই পড হাউজসহ কাপ্তাই লেকের পাড়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন রিসোর্টে যাওয়া যাবে খুব সহজেই।

পর্যটকদের থাকার জন্য সম্ভাব্য হোটেল মোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, সেনাবাহিনী  পরিচালিত আরণ্যক রিসোর্ট, পুলিশ বিভাগ  পরিচালিত পলওয়েল পার্ক, শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকায় সোনার বাংলা হোটেল, হোটেল মতিমহল, শহরের তবলছড়ি এলাকায় প্রায় প্রতিটি স্পটেই ভালো মানের হোটেল রয়েছে। এছাড়া লেকের পাড়ে গড়ে উঠা রাঙ্গাদ্বীপ, বার্গী লেকসহ কাপ্তাই লেক ঘেঁষে গড়ে উঠা বিভিন্ন রিসোর্টেও থাকা যাবে অনায়াসে।