বাসস
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৩

সুন্দরবন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি

সুন্দরবন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ছবি : বাসস

॥ আজাদ রুহুল আমিন ॥

বাগেরহাট, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম একটি। এ ম্যানগ্রোভ  বনাঞ্চল  সুন্দরবন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬হাজার ১৭বর্গ কিলোমিটার, বাংলাদেশে অংশে  অবস্থিত।

রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণির আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত। জরিপ অনুযায়ী ১০৬ টি বাঘ ও ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চিত্রা হরিণ রয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় এছাড়াও ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণি। যা প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এ বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়। শীতকাল হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আর তারই আকর্ষণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক, গবেষক দর্শনার্থী সুন্দরবনের এ সমস্ত স্থানে ভ্রমণ করতে আসেন।

কটকা সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে  অন্যতম। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। মাংলা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে অবস্থিত এবং সুন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র এটি। কটকায় রয়েছে বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ। এর আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল। যেখানে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করা যায় এবং সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের আসল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। খালের দুই ধারে দেখা যায় অসংখ্য চিত্রা হরিণ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও বানর, উদবিড়াল, বনমুরগি ও নানান ধরনের পাখির বিচরণ দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য ও গর্জন শোনা যায়। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রাণির অপূর্ব সব দৃশ্য এবং বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রতিনিয়ত। পর্যটকদের উঠা নামায় এখানে গ্যাংওয়ে পল্টন এবং কটকায় রাতে থাকার জন্য রেস্ট হাউস রয়েছে দেশি  পর্যটকদের জন্য ৫ হাজার ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১৪ হাজার টাকা। খাবারের ব্যবস্থা একান্তই নিজস্ব। অভয়ারণ্যে নিরাপত্তা ফি ৩শ' টাকা ও অভয়ারণ্যের বাইরে ১শ৫০ টাকা করে প্রতিজন পর্যটককে দিতে হবে।

দুবলার চর সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে এ স্থানটি অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এ দ্বীপটি মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করণের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে এবং সাগরে মাছ ধরে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করে। এটি জেলে পল্লী হিসেবেও অধিক পরিচিত। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে ধারনা পেতে হলে এ স্থানটি সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় সমূদ্র সৈকত।

দুবলার চরকে শুঁটকি পল্লী বললে এক নামেই চেনা সহজ। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে যে শুঁটকি মাছের দেখা মেলে এখান থেকেই চিটাগং আর বাইরে বিমান যোগে চলে যায়। এখন সেখানে রীতিমতো মেলা বসেছে। সুন্দর বনের ঘুটঘুটে আঁধারে এ দুবলার চরে শত শত অস্থায়ী ঘরে জেনারেটর চালু করলে রাতের অপূর্ব দৃশ্য যা চমকিত। নভেম্বর মাসে তিথি অনুযায়ী লাখ লাখ হিন্দু পূণ্যার্থীরা  পূর্ণিমা স্নানপর্ব সম্পন্ন করতে আসেন আর মেলা বসে যেটির অপূর্ব সমাহার আর কোথাও দেখা মেলেনা। এছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে করমজল যা পর্যটকদের দারুনভাবে আকর্ষণ করে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে হাড় বাড়িয়ায় বিশাল উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যতই উপরে উঠে যাওয়া ততটাই যেন স্বর্গের দেখা মেলে। আরও একটি মনোমুগ্ধকর নান্দনিক প্রাকৃতিক কোমলতার আবেশে পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে কঁচখালি ফরেস্ট বন ও জামতলায় রয়েছে সি বিচ। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে ওঠানামায় নির্মিত হয়েছে আর সি সি জেটি। দুবলার চরে যখন লঞ্চ স্টিমার জাহাজ সাত নদীর মোহনা অতিক্রম করে তখন এ অথৈ সাগরে দেখা মিলবে সাদা, নীল বর্নের জল যার যার সীমারেখা একে অপরকে অতিক্রম করে না। চোখে পড়বে বিশাল আকৃতির কুমির আর সরিসৃপ অনেক প্রলম্বিত পাড়ি জমাচ্ছে লোনা জলে।

জুন জুলাই আগস্ট এ সময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং সমুদ্র উত্তাল থাকায় সুন্দরবন ভ্রমণ বন্ধ রাখা হয় বাসস প্রতিনিধিকে জানালেন সুন্দরবন পূর্ববন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম। তিনি জানালেন সুন্দরবনে প্রবেশকালে বন বিভাগের কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হয় যেগুলো সম্পন্ন করে ট্যুরিজম কোম্পানি। তবে একসাথে ভ্রমণের জন্য ৭৫ জনের অধিক পারমিশন দেয়া হয় না। নিরাপত্তার জন্য বন্দুকধারী বন প্রহরী এবং সুদক্ষ গাইড রয়েছে।

তবে সুন্দরবন ভ্রমণের ক্ষেত্রে আগেভাগেই ট্যুরিজম কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আসতে হবে। ট্যুরিজম কোম্পানি মালিক আকরাম হোসেন তালিম, সোহরাব হোসেন, এম এ ওয়াদুদ ।

ঢাকা থেকে অনায়াসে বাগেরহাটে এসি নন এসি বাসে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে সরাসরি খুলনা পৌঁছে নির্ধারিত সময়ে ভৈরব নদীর পাঁচ নাম্বার ঘাট থেকে পর্যটকদের তুলে নিয়ে ছেড়ে যায় লঞ্চ স্টিমার জাহাজ। পর্যটন এলাকার বিলাশবহুল জাহাজ যেখানে রয়েছে সুইমিং পুল। প্রতি পর্যটকদের তিন রাত তিন দিন ভ্রমণ সময়ে প্যাকেজ ট্যুরে কমপক্ষে খরচ হবে  প্রতি জন বাবদ ১০ হাজার টাকা থেকে বিশ হাজার টাকা তবে আলাদা করে লঞ্চ স্টিমার ভাড়া করে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তার ভাড়া হবে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। এখানে অত্যন্ত আরাম আয়েশে মনোরম বেড এটাস্ট বাথরুম ব্যবস্থা রয়েছে। থাকার জন্য খুলনায় অসংখ্য ভালো মানের আবাসিক হোটেলসহ মোংলায়  পর্যটন কর্পোরেশনের  আধুনিক  মোটেল পশুরসহ দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলাতে  অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। যার ভাড়া সিংগেল ১ হাজার, ডাবল ১৪ শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বাসসকে জানান, সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত এছাড়া পর্যটকদের কখনও বনদস্যু কিংবা জলদস্যুর মুখাপেক্ষী হতে হয়নি। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য অনলাইনে অনুমতি নেয়া যাবে । বাগেরহাট লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি ও খেয়া পার জাহাজের মালিক ইঞ্জিনিয়ার এটি এম আকরাম হোসেন তালিম এ প্রতিনিধিকে জানান, সুন্দরবন খুবই স্বাচ্ছন্দ্যভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করতে ৪০ টিরও বেশি ট্যুরিজম কোম্পানি রয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণের অপারিত নৈসর্গিক মুগ্ধতা আনতে সাগরের গর্জন ঢেউ আর ঝাঁকে ঝাঁকে বিরল প্রজাতির প্রাণি ডলফিনের দেখা মিলবে।