শিরোনাম
শেরপুর, ৫ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন শেরপুরের মাইসাহেবা জামে মসজিদ। বক্রাকারে খিলানের ব্যবহার ও স্থাপত্যকলার আধুনিক ডিজাইন মসজিদটিকে ভিন্ন রূপ দিয়েছে।
কথিত আছে, প্রায় আড়াইশত বছর আগে শেরপুরের তৎকালীন তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার জমিদারকে দাওয়াত করেন। দাওয়াতে সাড়া দিয়ে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে আসেন। এরপর মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরের একটি স্থানে বিশ্রাম নেন। যেখানে তিনি বিশ্রাম করেন সেই স্থানে জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘর ছিল। পরবর্তীতে বিশ্রামের জায়গাটি মুক্তাগাছার জমিদারের পছন্দ হয় এবং জায়গাটি তিনি শেরপুরের জমিদারকে নিজ নামে লিখে দিতে অনুরোধ করেন। মুক্তাগাছার জমিদারের অনুরোধ রাখেন, শেরপুরের তিনআনি জমিদার। দাওয়াত শেষে নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার আগে মুক্তাগাছার জমিদার চিন্তা করেন, সেই জায়গাটি কোন মুসলিম সাধককে লিখে দিবেন। ঠিক সেসময় মীর আব্দুল বাকী নামে একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারকের খোঁজ মিলে। কিন্তু সেই ধর্ম প্রচারক জানান, তার সম্পূর্ণ জায়গা দরকার নেই। যতটুকু জায়গা মসজিদ নির্মাণে প্রয়োজন তার ততটুকুই তিনি গ্রহণ করবেন। এরপর মুসলিম সাধকের অনুরোধে তাকে মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গাটি লিখে দেওয়া হয়।
১৮৬১ খ্রীস্টাব্দে সেই ধর্ম প্রচারক এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলাম প্রচারক মীর আব্দুল বাকীর মত্যুর পর তার স্ত্রী সালেমুন নেছা বিবি মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করেন। সেসময় আল্লাহর ধ্যানে সর্বদা মগ্ন ওই সালেমুন নেছাকে সবাই 'মা ' বলে সম্বোধন করতেন। ওই " মা "থেকেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘মাইসাহেবা জামে মসজিদ’। সালেমুন নেছার মৃত্যুর পর তার ভাগনে সৈয়দ আবদুল আলীর ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়। মসজিদটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র বাগরাকশা শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এছাড়া শেরপুর জামালপুর বাসস্ট্যান্ড থেকেও ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির দূরত্ব কম। মসজিদটি তিনতলা বিশিষ্ট। নিচতলা সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত।
এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার মুসুল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি শুক্রবার জেলা শহরের বাইরে থেকে হাজার হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য এখানে আসেন। এদিন সবাই মিলেমিশে দেশ ও গোটা মুসলিম জাতির জন্য বিশেষ দোয়া করে থাকেন। মজিদের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে— হুজরাখানা বা মুয়াজ্জিন কক্ষ। অজুর জন্য রয়েছে দুইটি আলাদা স্থান।একটি মসজিদের দক্ষিণ পাশে অন্যটি উত্তর পাশে। যেখানে ২ শতাধিক মুসুল্লি একসঙ্গে অযু করতে পারেন। পবিত্রতা অর্জনের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বিশাল এ মসজিদের সামনের অংশে রয়েছে খালি মাঠ। এখানে প্রতি বছর দুইটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রমজানের সময় প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ মুসল্লী ইফতার করে থাকেন এ মসজিদে।
ইফতারির খরচ মসজিদ কমিটির লোকজন এবং জেলার বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ বহন করে থাকেন।
মসজিদে একজন খতিব, একজন সানি ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন এবং তিনজন খাদেম নিয়োজিত আছেন।
এছাড়াও মসজিদটির রয়েছে অসংখ্য বয়স্ক ছাত্র। যারা প্রতিদিন ফজর নামাজ আদায় করার পর ২ ঘণ্টা করে পবিত্র কোরআন শেখেন। বয়স্ক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। পুরো মসজিদ পাহারা দেওয়ার জন্য দুইজন লোক নিয়োজিত রয়েছে। একজন মসজিদ কর্তৃপক্ষের, অন্যজন পৌর কর্তৃপক্ষের।
এছাড়াও মসজিদের চারপাশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতাভুক্ত। মসজিদটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতি শুক্রবারে মসজিদের দানবাক্স থেকে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়।