বাসস
  ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৭

যে মসজিদে মাত্র ৭ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন

নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চৌজা গ্রামে অবস্থিত ‘চৌজা পুরাকীর্তি’ মসজিদটি দেশের প্রাচীন ক্ষুদ্রতম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছবি: বাসস

।। বাবুল আখতার রানা ।।

নওগাঁ, ১৯ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জেলার মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চৌজা গ্রামে অবস্থিত ‘চৌজা পুরাকীর্তি’ মসজিদটি দেশের প্রাচীন ক্ষুদ্রতম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটিকে দেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম মসজিদও বলা যেতে পারে। এক কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদে  ইমামসহ ৭ জন মুসল্লি  একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।

জানা যায়, বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চর হোগলা গ্রামে দেশের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদে ইমামসহ ৩ জন একসাথে নামাজ আদায় করা যায়। বটগাছ সদৃশ গাছ দিয়ে ঘেরা এই মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে গায়েবী মসজিদ নামে পরিচিত। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির নির্মাণকাল জানা যায়নি। তবে স্থানীয়দের কারো কারো মতে, এটি পর্তুগীজ আমলে নির্মিত। স্থানীয়দের মতে, এটি পৃথিবীর ক্ষুদ্রতর মসজিদ। 

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে রয়েছে দেশের আরো একটি ক্ষুদ্রতর মসজিদ। এই মসজিদের ৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থ। ইমামসহ একসাথে ৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। তবে এই মসজিদে আলো জ্বালানো নিষেধ। স্থানীয়দের মতে, এই মসজিদে আলো জ্বালালে আলো নিভে যায়। তাই কেউ এখানে আলো জ্বালে না। এ মসজিদ দুটোতে এখনও নামাজ আদায় করা হয়।   

দেশের ক্ষুদ্রতম অপর দুটি প্রাচীন মসজিদ বগুড়ায় অবস্থিত। বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে তারাপুর ও মালশন গ্রামের মসজিদ দুটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারাপুর গ্রামের মসজিদে একসাথে ৩ জন এবং মালশন গ্রামের মসজিদে মাত্র ৫ জন একসাথে নামাজ পড়া যেতো। শত বছরের পুরাতন এই মসজিদগুলোতে এখন আর কেউ নামাজ পডে না। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তারপরেই ক্ষুদ্রতর মসজিদের তালিকায় আছে চৌজা পুরাকীর্তি মসজিদ। এ মসজিদে ইমামসহ  মাত্র ৭জন নামাজ আদায় করতে পারেন। এ মসজিদটিতে এখনও নিয়মিত নামাজ আদায় হয়। তবে মুসল্লি সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে অস্থায়ী ভাবে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

আয়তকার এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৫ ফিট ও প্রস্থ ১৫ ফিট। মসজিদটির দেওয়ালের পুরত্ব প্রায় ৩ ফিট ৯ ইঞ্চি, মসজিদের মুল দরজাটির উচ্চতা ৫ ফিট এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশের ছোট দুটি দরজার উচ্চতা ৪ ফিট ৯ ইঞ্চি। নওগাঁ জেলা শহর থেকে মসজিদটির দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। ২০০২ সালের ১৯জুন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় চৌজা মসজিদকে ‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদ এক কক্ষ বিশিষ্ট ছোট্ট মসজিদ। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদে মোট তিনটি খিলান দরজা এবং চার কোনায় চারটি বুরুজ বা মিনার রয়েছে। এছাড়া মসজিদের মুল দরজা, উত্তর ও দক্ষিণের দরজা এবং মেহরাবের উপরের অংশে দুটি করে মোট ৮টি ছোট মিনার রয়েছে। মসজিদের তিনটি খিলান দরজার উপরে চালা আকৃতির নকশা করা। এছাড়া প্রতিটি বুরুজ বা মিনারের নিচের অংশে কলস আকৃতির  নকশা করা রয়েছে। মসজিদের প্রবেশ দরজার উপরে টাঙানো রয়েছে ৫টি বাঁশের কাঠি। যা দেখে অতীতে নামাজের ওয়াক্তের হিসাব করা হতো। মসজিদের কোন শিলালিপি না থাকায় এর নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোন ধারনা পাওয়া যায়নি। তবে কারো কারো মতে, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়ে থাকতে পারে।

চৌজা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, আমরা চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদে দীর্ঘদিন যাবত নামাজ আদায় করে আসছি। তবে এ মসজিদটি কবে নির্মাণ করা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। এমনকি আমাদের পূর্ব পূরুষরাও মসজিদটির নির্মাণকাল বলতে পারেননি।

একই গ্রামের তুহিন দেওয়ান বলেন, মসজিদটিতে স্থানীয় মুসল্লিদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে প্রতি জুমায় অনেকে নামাজ আদায় করতে আসেন। ধারনা করা হয়, মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত।

চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ রায়হান মন্ডল বলেন, চৌজা পুরাকীর্তি জামে মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। এই মসজিদটিতে একজন ইমাম এবং ছয়জন মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিগত সময়ে মসজিদটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা ২০০৪ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংস্কার করা হয়। বর্তমানে মসজিদটিতে শেওলা ধরে মসজিদটির সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মসজিদটিতে অজু এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় মুসল্লিদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনার্থী মোহাম্মদ আলিমুল্লাহ খান বলেন, এক গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন এই মসজিদটিতে এসে জুমার নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মসজিদের ভেতরে ইমামের পেছনে আমিসহ মোট ছয়জন মুসল্লি নামাজ আদায় করলাম। এছাড়া মসজিদের বাইরে বেশকিছু মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেছে। তবে মসজিদটির সংস্কার করা প্রয়োজন।

চৌজা পুরাকীর্তি মসজিদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নওগাঁর পাহাড়পুর ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু বলেন, চৌজা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মসজিদটি আমি দ্রুত পরিদর্শন করবো। যদি মসজিদটির কোন সংস্কারের প্রয়োজন হয় তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং সংস্কার করা হবে।