বাসস
  ২১ মার্চ ২০২৫, ১৪:৫৩
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ১৫:১৭

পাহাড় চূড়ায় নান্দনিক মসজিদ

ছবি : বাসস

// জীতেন বড়ুয়া //

খাগড়াছড়ি, ২১ মার্চ ২০২৪ (বাসস) : যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি,  রোদের সাথে শুভ্র মেঘদলের নিত্য লুকোচুরি খেলা, সেখানেই পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত নান্দনিক মসজিদ। মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। 

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুক চিঁড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশের সবচে উঁচু স্থানে নির্মিত এই মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। যার অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়।

সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। চারতল বিশিষ্ট ভিতের ওপর দন্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের  দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট।  

সৌন্দর্য্যে অপরূপ এই মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। একই বছর ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। এরপর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট  জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে  ।

দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতীব মো. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুম’আ এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে। তারাবির জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামায়াতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসংখ্য পর্যটক অংশ  নেন।’

সাজেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে  সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক। মসজিদ না থাকায় এতো বছর নামাজ আদায়ে বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে ধর্মভিরু মুসলিম পর্যটকদের। তবে এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা। প্রকৃতির অবারিত সবুজের মাঝে সুনসান পরিবেশে এমন সৌন্দর্য্যমন্ডিত মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়ে পর্যটকরা দারুণ উচ্ছ্সিত। 

রাজধানী ঢাকা থেকে সাজেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সোহেল আরমান বাসসকে বলেন, ‘চার বছর আগেও একবার এখানে এসেছিলাম। মসজিদ না থাকায় তখন জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারিনি। তবে এবারে এসে মসজিদের এমন নিরব-নির্মল পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে পেরে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করছি।’

দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদে অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন এই মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে  দৈনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় কেবল পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষাঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় হচ্ছে।’