শিরোনাম
শাহজাহান নবীন
ঝিনাইদহ, ২২ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার যেন মসজিদের জনপদ। প্রাচীন এই জনপদে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ। তার মধ্যে অন্যতম জোড় বাংলা মসজিদ। স্থানীয়রা এই মসজিদকে জোড়াঢিবি মসজিদ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৬শ’ বছরের পুরাতন এক গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন জোড় বাংলা মসজিদ এখনও টিকে আছে স্বমহিমায়।
প্রায় সাড়ে ৬শ’ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি ১৯৯২-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননের আগ পর্যন্ত মাটির নিচে ঢাকা পড়ে ছিলো। বর্তমানে সেখানে মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।
কথিত আছে, ১২ জন ইসলাম ধর্মপ্রচারক বারোবাজারে আস্তানা গাড়েন। স্থানীয়রা এই জনপদকে ১২ আউলিয়ার বাজার বলে ডাকতেন। এক পর্যায়ে সেই নামটিই বারোবাজার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। হিজরি ৮০০ শ শতকের পর হযরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর নেতৃত্বে খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচারণায় আসেন আউলিয়ারা। তাদের অনেকেই বারোবাজারে আস্তানা গাড়েন। নির্মাণ করেন একাধিক মসজিদ। তেমনই একটি মসজিদ এই জোড় বাংলা মসজিদ।
জোড় বাংলা মসজিদের নির্মাণকাল
ঐতিহাসিক বর্ণনা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যমতে, আনুমানিক ৮০০ হিজরি সনে সুলতান মাহমুদ জোড় বাংলা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। সুলতান মাহমুদ ছিলেন আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের পুত্র। কথিত আছে, বর্তমানে যেই জায়গাটিতে মসজিদটি নির্মিত, ঠিক এখানেই পাশাপাশি দুটো কুঁড়ে ঘর ছিল। সেই থেকেই মসজিদটির নামের সঙ্গে জোড় শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। কেউ আবার মনে করেন, মসজিদের পাশেই দুটো দীঘি পাশাপাশি আছে। সেকারণেও জোড় বাংলা মসজিদ নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটির সঙ্গে যশোরের অভয়নগরের শুভারাদা মসজিদ ও বাগেরহাটের বিবি কেরানী মসজিদের নির্মাণ শৈলীর অভূতপূর্ব মিল পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘ সময় মসজিদটি ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা ছিল। ১৯৯২-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খননের মাধ্যমে মসজিদটি আবিষ্কার করে। মসজিদটি এখন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত এলাকা হলেও এখানে নিয়মিত নামাজ পড়েন মুসল্লিরা।
জোড় বাংলা মসজিদের বৈশিষ্ট্য
ইসলামী স্থাপত্যশৈলী ও চারুকলার এক অনন্য নিদর্শন এই জোড় বাংলা মসজিদ। ইসলামী সভ্যতা ও প্রথার নান্দনিকতা দারুণভাবে মসজিদটির অবকাঠামোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদটি প্রায় ১১ ফুট উঁচু। এর ভেতরের অংশ ছোট ছোট পাতলা ইটের গাঁথুনিতে তৈরি। বর্গাকৃতির জোড় বাংলা মসজিদটির পূর্ব পাশে তিনটি খিলান সংযুক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে। এ ছাড়া চারকোণায় আটকোণ বিশিষ্ট ৪টি কারুকার্যমণ্ডিত পিলার। পশ্চিম দিকের দেয়ালে অর্ধবৃত্তাকার পোড়ামাটির নকশাকৃত তিনটি মেহরাব। মেহরাব ও পশ্চিমপাশের দেওয়ালে ফুল-পাতার দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির কারুকাজ। মসজিদের পাশেই রয়েছে সুলতান মাহমুদ শাহের শাসনামলে খননকৃত অন্ধপুকুর দিঘী। মুসল্লিদের গোসল, ওযু ও স্থানীয়দের মিঠাপানির ব্যবস্থা করার জন্যই দীঘিটি খনন করা হয় বলে জানা যায়।
স্থানীয় মুসল্লি আবুল কালাম বলেন, মসজিদটি একসময় মাঠির ঢিবির নিচে ঢাকা ছিল। আমার তখন জন্মও হয়নি। পরে সরকার মাঠি খুঁড়ে মসজিদটি আবিষ্কার করে। এখানে নিয়মিত নামাজ পড়েন স্থানীয় মুসল্লিরা। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ এই মসজিদটি দেখতে আসেন।
ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ছায়া সুনীবিড় এক গ্রামীণ পরিবেশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ। জোড় বাংলা মসজিদ ঘুরে দেখতে হলে প্রথমে বারোবাজার পৌঁছতে হবে। ঝিনাইদহ জেলা শহর, যশোর জেলা শহর, কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে খুব সহজেই বারোবাজারে পৌঁছানো যায়। বারোবাজার থেকে অটোরিক্সা, বিদ্যুৎ চালিত ইজিবাইক ও ভ্যানে চেপে অল্প ভাড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় জোড় বাংলা মসজিদ চত্বরে।