বাসস
  ২৮ মার্চ ২০২৫, ২৩:২৮
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০৪

ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কক্সবাজার প্রস্তুত

ছবি : সংগৃহীত

\ ইব্রাহিম খলিল মামুন \

কক্সবাজার, ২৮ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রত্যাশিত পর্যটকদের আগমনকে সামলাতে কক্সবাজারের হোটেল এবং মোটেলগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

ছুটি নয় দিন হওয়ায়, শহরে ঈদের পরের দিন থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরবর্তী পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে।

হোটেল সিগালের সিইও শেখ ইমরুল সিদ্দিকী রুমি বাসসকে জানান, কক্সবাজারে বুকিং ইতিমধ্যেই পুরোদমে চলছে, অনেক পর্যটক ১ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের থাকার জন্য আগে থেকে রুম বুকিং করছেন। ১ ও ২ এপ্রিলের জন্য, তারকা মানের হোটেলগুলোতে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যেই বুকিং করা হয়েছে, যেখানে ৩ থেকে ৪ এপ্রিলের জন্য বুকিং প্রায় পূর্ণ, যা ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সবচেয়ে পছন্দের স্থান কক্সবাজার। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এভাবে থাকলে এবার কক্সবাজারে আগের বছরের চেয়ে বেশি পর্যটক আসতে পারে।

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই দুই মাসে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ২১ লাখ পর্যটক। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে এসেছিলেন প্রায় ৭ লাখ পর্যটক। এবারের ঈদের ছুটিতে ১০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতি হোটেলের কক্ষ ভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখে কক্ষ ভাড়া পরিশোধ করতে পারেন। অনলাইনেও অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া অগ্রিম বুকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন ভ্রমণপিয়াসীরা ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদ অবকাশ যাপনে পছন্দের হোটেল-মোটেল-কটেজে এরইমধ্যে বুকিং দিয়েছেন। এতে গরমেও পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে ১ থেকে ৫ এপ্রিলের জন্য বুকিং তুলনামূলক ভালো হচ্ছে।’

জানা যায়, প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদে অতিথি বরণে হোটেল-মোটেল সাজানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অনেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন ব্যবহার্য পণ্য। রুমে দেওয়া হচ্ছে নতুন রং। জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন করে।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাথে ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে ঈদের ছুটিতে খাবারের অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে পর্যটকদের হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার। এরপরও কেউ অতিরিক্ত খাবারের দাম রাখার অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে এবার ৯ লাখের অধিক পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত আরও ৩ দিনে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ এবং যানবাহনে যাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করা হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে প্রশাসনকে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চুরি-ছিনতাই রোধে শহরের অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজটের নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায় এবং রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম যেন বাড়ানো না হয়, সেসব তদারকির জন্য একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হবে। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।