শিরোনাম
ঢাকা, ৭ জুন, ২০২৪ (বাসস) : আগামী ২০২৪-২০১৫ অর্থবছরের জন্য দেশের ৫৩তম জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এমপি-কে অভিনন্দন জানিয়েছে মেট্রোপলিট্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী, ঢাকা (এমসিসিআই)।
এমসিসিআই’র সভাপতি কামরান টি, রহমান আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনার গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, কর ব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা জনগণকে যথাযথ সেবা প্রদানের আরো সুযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এমসিসিআই সবসময় কর প্রশাসনে অর্থবহ কাঠামোগত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে আসছে, যেন কর প্রশাসন যথাযথভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। নিয়মিত কর প্রদানকারী ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের উপর আরো বেশি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। তাই, বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধান করার জন্য এমসিসিআই জোর দাবী জানাচ্ছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমসিসিআই মনে করে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে রপ্তানি বাজার সংকুচিত হওয়া; মন্থর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, ব্যাংক ঋণের জন্য উচ্চ সুদহার, ফিলিস্তিন-ইসরাইল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়ন এবং ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীতকরণের সময় বাজেট প্রস্তুত করা অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেট ৭৯৭,০০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭৬১,৮৫ কোটি টাকা) চেয়ে শতকরা ৪.৬২ ভাগ বেশী, সংশোধিত বাজেটের (৭১৪,৪১৮ কোটি টাকা) ১১.৫৬ শতাংশ বেশী, এবং জিডিপির ১৪.২৪ শতাংশ। অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকার আসন্ন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২৬৫,০০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। চলতি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে শিল্পখাতকে সচল রেখে এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার সীমিত রেখে বাজেটে ৬.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নির্ধারিত ৪৩০,০০০ কোটি টাকা থেকে ১১.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৪৮০,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৪-১৫ অর্থবছরে ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে ১৮২,৮৩ কোটি টাকা, আয়কর কর্তৃপক্ষকে ১৭৫, ৬২০ কোটি টাকা এবং শুদ্ধ কর্তৃপক্ষকে ১২১,৫৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে।
২০২৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২৫৬,০০০ কোটি টাকা (যা জিডিপির ৪.৬%)। মোট ঘাটতির মধ্যে ৬৫,১০০ কোটি টাকা বাইরের উৎস থেকে এবং ১৬০,৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংস্থান করা হবে। এই ১৬০,৯০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৩৭,৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে এবং ২৩,৯০০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুপারিশকৃত কর ব্যবস্থার চলমান সংস্কারের শর্তাবলীর কারণে চূড়ান্ত বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি পেতে পারে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে ৮.৮ শতাংশে উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সুতরাং, এমসিসিআই সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার জন্য যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছে।
চেম্বার মনে করে যে, ২০২৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে গরীবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উপর অধিকতর নজর দেওয়া উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ ১৩৬,০২৬ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২৬,২৭২ কোটি টাকা ছিল, এই খাতে মাত্র ১,৭৫৪ কোটি টাকা বা ৭.৭২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমসিসিআই এই খাতের বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে।
তালিকা বহির্ভূত কোম্পানী এবং একক ব্যক্তি কোম্পানিসমূহের কর্পোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা এমসিসিআই প্রশংসা করছে। তবে এমসিসিআই এই হার অন্যান্য কোম্পানীসমূহের জন্যও কমানোর সুপারিশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি না করে বরং করহার ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করার বিষয়টিকে এমসিসিআই পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছে। চেম্বার মনে করে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি তথা করনেট বৃদ্ধি না করে, শুধুমাত্র বর্তমান করদাতাদের করহার বৃদ্ধি করলে আশানুরূপ কর জিডিপি অনুপাত অর্জন করা সম্ভব নয়।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ ও মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুদ্ধ বিধিমালা, ২০১৬ এর আলোকে আপীল কমিশনারেট ও আপীলাত ট্রাইবুনালে আপীল দায়েরের ক্ষেত্রে দাবীকৃত করের ২০৭ শতাংশ জমাদানের পরিবর্তে ১০৭ শতাংশ এর বিধান প্রস্তাব করায় এমসিসিআই প্রশংসা করে।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতের জন্য কর অব্যাহতির সময়সীমা ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বর্ধিত করায় চেম্বার প্রশংসা করে।
মাত্র ১৫ শতাংশ কর প্রদান সাপেক্ষে ঢালাওভাবে অপ্রদর্শিত অর্থকে (কালো টাকা) সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে এমসিসিআই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।