বাসস
  ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:৫১
আপডেট  : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৯

শ্যামপুর সুগার মিলস পুনরায় চালু করলে কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে

॥ মো. মামুন ইসলাম ॥ 
রংপুর, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড (এসএসএমএল) ফের চালু করা হলে এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকসহ অনেক মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি এনে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারে। 

বাসসের সাথে আলাপকালে স্থানীয় কৃষক, মিলটির সাবেক শ্রমিক ও বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতারা এ ব্যাপারে তাদের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সম্ভাবনাময় এ মিল পুনরায় চালু করবে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি লাভজনকভাবে চলবে। 

তারা বলেন, এক সময় হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উৎস ছিল এই শিল্প। চার বছর আগে ২০২০ সালে লোকসানের কারণে মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সেখানের সাধারণ মানুষের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।

রংপুর সদরের পশ্চিম গিলাবাড়ি গ্রামের আখ চাষি মোশারফ হোসেন বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষ বেশি লাভজনক। তিনি বলেন, ‘আমি চার বছর আগেও আমার পাঁচ একর জমিতে আখ চাষ করে সর্বাধিক লাভ পেয়েছি। এসএসএমএল বন্ধ থাকায় আমাকে ধান চাষ করতে হয়। আমি এতে এখন সবচেয়ে কম মুনাফা পাচ্ছি।’

বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শিবপুর কুঠিপাড়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, তিনি কয়েক দশক ধরে তার ২৫ একর জমিতে আখ চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেন। 

তিনি বলেন, ‘এসএসএমএল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমি আখ চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। ধান, আলু ও অন্যান্য ফসল চাষ থেকে বর্তমানে আমার যে আয় হচ্ছে তা আখ চাষের চেয়ে অনেক কম।’ তিনি আরও বলেন, এরফলে কৃষকরা ধীরে ধীরে তাদের স্বচ্ছলতা হারাচ্ছেন।

রংপুর সদরের পার্শ্ববর্তী চন্দনপাট ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তিনি তার দুই একর জমিতে অনেক বছর ধরে আখ চাষ করেন। 
তিনি বলেন, ‘আমি আখ চাষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। আমি বর্তমানে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করে খুব কম মুনাফা পাচ্ছি।’ 

অন্য অনেকের মতো কৃষকরাও পুনরায় শ্যামপুর সুগার মিলস চালু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে তারা আবার সর্বোচ্চ মুনাফা পেতে এবং তাদের সন্তানদের জন্য একটি ভাল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে আখ চাষ পুনরায় শুরু করতে পারে। 

এসএসএমএল কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আকতারুল বাদশা বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার কতিপয় চিনি আমদানিকারক ও প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে ২০২০ সালে ১৫টির মধ্যে ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। 

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দেশের চিনি শিল্প, কৃষক, শ্রমিক, অর্থনীতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন-জীবিকা ও উন্নত ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য এসএসএমএল এবং অন্যান্য সকল বন্ধ চিনিকল পুনরায় চালু করা।’

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও এসএসএমএল আখ চাষি কল্যাণ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বলেন, চিনি উৎপাদনে বাংলাদেশে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এসএসএমএল বন্ধের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। 

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এসএসএমএলসহ বন্ধ হওয়া ছয়টি চিনিকল পুনরায় চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। 

তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ চিনি উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে টাস্কফোর্স থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শীঘ্রই সকল বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করা।’

এসএসএমএলের ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. খোরশেদ আলম জানান, প্রয়োজনীয় মেরামত ও অন্যান্য কাজ শেষ করে এসএসএমএল-এ আখ মাড়াই পুনরায় চালু করতে ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। 

বাসসের সাথে আলাপকালে এসএসএমএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদ সাদিক বলেন, রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর এলাকায় ১৯৬৪ সালে  ১১১.৪৫ একর জমির ওপর সুগার মিলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ মিলের আওতায় আখ চাষযোগ্য ৩০,৫০০ একর জমি রয়েছে । 

মিলটি ১৯৬৭ সালে আখ মাড়াইয়ের কাজ শুরু করে। মিলটির আখ মাড়াই ক্ষমতা দৈনিক ১,০১৬ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ১০,১৬১ মেট্রিক টন। 

তিনি বলেন, বর্তমানে মিলটির কর্মকর্তাসহ ৬৫ জন কর্মী রয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাংক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে এর ২২৫.৮৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। 
আর্থিক সংকটের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসএসএমএল-এ আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ ছিল। 

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা মাসিক বেতন, কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ভাতা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক/কর্মচারীদের বকেয়া, বিভিন্ন সরবরাহকারীর বকেয়া ২৩.৩৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। 

তিনি আরও বলেন, ‘যদি অন্তর্বর্তী সরকার এসএসএমএল পুনরায় চালু করে, তাহলে প্রায় এক লাখ লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। আর এটি সমগ্র এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।