শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বলেছেন, সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্যাগুলোর পাশাপাশি, চারপাশের চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, “আমরা আর্থিক সংকটে নেই, বরং কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছি। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এই চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে কিছু অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সমস্যা, যেমন- বাণিজ্য এবং আর্থিক ব্যবস্থা। আমরা এসবই মোকাবেলা করতে সক্ষম হব এবং আমরা করব।”
অর্থ উপদেষ্টা রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিজনেস স্কুল আয়োজিত ‘ফাইনান্সিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক রিফর্মস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব বলেন।
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ এবং ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি-এর সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর.এফ হোসেন। ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের ভারপ্রাপ্ত ডিন ডক্টর মোহাম্মদ মুজিবুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার ।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে, অর্থ উপদেষ্টা পূর্ববর্তী শাসনামলে বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “আমরা একটি বার্তা দিতে চাই যে, সরকারি ও বেসরকরি খাত থেকে কেউ বিদেশে অর্থ পাচার করতে পারবে না এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।” আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে চলমান সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পরবর্তী সরকারের সামনে একটি ‘পদচিহ্ন’ রেখে যেতে চায়, যাতে পরবর্তী সরকার এবং নীতি নির্ধারকেরা সেই পদচিহ্ন অনুসরণ এগিয়ে যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, সরকার তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার এবং এনবিআরে কিছু স্বল্পমেয়াদী সংস্কার করছে এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারগুলো ধারাবাহিক রাজনৈতিক সরকার করবে। ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন সক্রিয় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের খাতে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বছরের পর বছর বাইরে থেকে দেশের আর্থিক খাতে যে গভীর ক্ষত হয়েছে, তা কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, তা সত্ত্বেও দেশের জনগণের সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা থাকায় হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে তিনি জানান। তিনি অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে সরকারের প্রচেষ্টাকে সম্পূরক করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিশেষ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদানের কথা স্মরণ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন যে, বিগত শাসনামলে প্রবৃদ্ধির বিষয়ে মিথ্যা পরিসংখ্যান ছিল। তিনি জানান, তার নেতৃত্বাধীন শ্বেতপত্র কমিটি বিগত আওয়ামী লীগ শাসনের উত্তরাধিকারসূত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী ধরনের অর্থনীতি পেয়েছে, উন্নয়নের গতিপথে কী কী সমস্যা ছিল এবং তথ্য-উপাত্তের রাজনীতিকরণ কি ধরনের ছিল তা নির্ধারণ করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, জিডিপিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের অনুপাত গত ১০ বছর ধরে ২৩ শতাংশের কাছাকাছি রয়ে গেছে এবং কর থেকে জিডিপি অনুপাতও ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ছিল অবৈধ আর্থিক প্রবাহ এবং আন্তঃখাত ভারসাম্যহীনতা। ড. দেবপ্রিয় অভিমত প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে না পারলে সংস্কারের পথে এগোনো সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার ফারজানা লালারুখ তার বক্তব্যে পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতাকে একটা বড় বাধা বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, বাজার পর্যবেক্ষণ সংস্থা তার সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং ডিজিটালাইজেশন নিয়ে কাজ করে পুঁজিবাজারে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। বিএসইসি কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, তারা রেগুলেটর না হয়ে ফ্যাসিলিটেটর হতে চান।
দিনব্যাপী এই সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে নতুন নতুন সমাধান প্রস্তাব করেন। সংলাপের প্রস্তাবনাগুলো একটি স্বচ্ছ , অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সংলাপ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রস্তাবনাগুলো ইভেন্টের প্রকাশনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা তাদের মতামত সবার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেবে।