শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : তৈরি পোশাক শিল্পে ধীরে ধীরে নারী শ্রমিক কমে যাওয়া এ খাতের জন্য একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কয়েক বছর ধরে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত কমার এই প্রবণতা ঠেকাতে একটি নিরাপদ, নারী-বান্ধব কাজের পরিবেশ তৈরি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, নির্দিষ্ট সময়ে ও ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা অপরিহার্য। এই পদক্ষেপগুলো একটি দক্ষ এবং অনুপ্রাণিত কর্মী বাহিনী বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি, যা শুধুমাত্র পোশাক শিল্পের জন্যই নয়, দেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আজ শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে ’বুনন ২০৩০: বাংলাদেশের পোশাক খাতে মূল কার্যক্রম : গভীর পর্য়বেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এটি উপস্থাপন করেন লাইটক্যাসল পাটনার্স-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।
ঢাকা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিজনেস কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। অপরাজিতা ও বুনন প্রকল্প নিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক আইনি ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উল্লিখিত শিরোনামে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। লাইটক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি এক্সচেইঞ্জ বাংলাদেশ ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর টেকসই জিএসপি প্লাস লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত আরেকটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন মোহাম্মদ হাতেম।
প্রতিবেদনটি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নীটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)’র নেতৃবৃন্দের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এত বলা হয়, এই শিল্পে ১৯৮০ সালে নারী শ্রমিকদের হার ছিল ৮০ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ৫৩.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত, ১৮ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত তারা এই শিল্পে নিয়োজিত থাকেন। বয়স ৩৫ হওয়ার পর তারা এই কাজ ছেড়ে বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকতে থাকেন। বিকল্প হিসেবে তারা যেসব কাজ বেছে নিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে: কৃষিভিত্তিক ও গৃহস্থালী ও নিজের মালিকানাধীন দর্জির দোকানে কাজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে কারখানাগুলোতে অস্থিরতা, বেশি টাকা উপার্জনের আশা ও তুলনামূলক স্বাধীন পেশার কারণে তারা এইসব পেশায় আগ্রহী। এভাবে নারী শ্রমিক কমতে থাকলে দক্ষ শ্রমিক স্বল্পতায় দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষে থাকা তৈরি পোশাক খাতে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।
এতে আরো বলা হয়, এই অবস্থায় নারীদের পোশাক খাতে আগ্রহী করে তুলতে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা বাড়ানো ও সঠিক সময়ে ন্যায্য মজুরি প্রদান জরুরি। এর পাশাপাশি এই খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ডিকার্বনাইজেশন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরবর্তী পরিস্থিতি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়করণের প্রভাব মোকাবেলা করা জরুরি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩-২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে আছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে, বাংলাদেশ ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা জাতীয় জিডিপিতে ১০.৩৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। এই শিল্পের সাথে বর্তমানে ৪ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা না হলে পোশাক খাত ও দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
গত এক বছরে অনুষ্ঠিত চারটি সংলাপে উপস্থিত সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ৫০ জন নীতিনির্ধারক, ৫০ জন শিল্প নেতাসহ মোট ১০০ জনের অধিক মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। চারটি সংলাপের মধ্যে প্রথমটিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সার্কুলারিটি ও ডিকার্বোনাইজেশনের প্রভাব, দ্বিতীয়টিতে শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ, তৃতীয়টিতে নীতিগত অপরিহার্যতা, চতুর্থটিতে অটোমেশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব- এই চারটি বিষয় গুরুত্ব পায়। সেগুলোর ধারাবাহিকতায় আজ ছিল ‘বুনন: ২০৩০’ সংক্রান্ত এই বছরের সমাপনী অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিকেএমইএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. জব্বার, প্রাইড গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ. মোমেন, বিল্ড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম ও পোশাক কারখানার সাথে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।