শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : আজ এক সেমিনারে বক্তারা টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), জেট্রো, ঢাকায় জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (জেসিআইএডি) এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় ‘জাপান-বাংলাদেশ সহযোগিতা: এফডিআই ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এ মন্তব্য করেন। আজ নগরীর একটি হোটেলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশে জাপান দূতাবাস, জাইকা ও জেবিসিসিআই এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে। সেমিনারের লক্ষ্য ছিল জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
এফআইসিসিআইয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে জাপান, বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশিষ্ট মূল বক্তা ও আলোচকদের অংশগ্রহনে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
জেট্রো বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করার সুযোগ ও ব্যবসা করার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রথম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি এতে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে জাপানি এসএমইগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহের উপর আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের ৪৫.৫ শতাংশ কোম্পানি আগামী ১-২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
তিনি ব্যবসায়িক পরিবেশ সংক্রান্ত অসন্তোষ ছাড়াও উলে¬খযোগ্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন।
তিনি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি, স্বচ্ছতা এবং স্থানীয় ক্রয় ব্যবস্থাপনার মতো সমস্যাগুলির সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি উলে¬খ করেছেন যে, বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ প্রতিযোগিতামূলক যা জাপানের তুলনায় ৬০ শতাংশেরও কম।
জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদ "বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জাইকার সম্পৃক্ততা" শীর্ষক দ্বিতীয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য জাইকা-এর উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
তমোহিদ বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) এবং বঙ্গোপসাগরে বহু-স্তরযুক্ত সংযোগের (এমআইডিআই) মতো চলমান প্রকল্পগুলির রূপরেখা তুলে ধরেছেন। তিনি এগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
ইচিগুচি বলেন, জাইকার প্রচেষ্টাগুলি শিল্প খাতের বৈচিত্র্যকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিশেষ করে অনুমতি, প্রবিধান ও লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে উন্নতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
তিনি তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ও লজিস্টিকস খাতের পুনর্র্নিমাণে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো অবকাঠামো প্রকল্পগুলির উলে¬খযোগ্য ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।
সেমিনারে মিতসুবিশি কর্পোরেশনের জিএম ও কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হিরোশি উয়েগাকি সঞ্চালনায় একটি প্রাণবন্ত প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন: জেবিসিসিআই’র সভাপতি তারেক রাফি ভূঁইয়া, মিটসুই অ্যান্ড কোং এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ শরিফুল আলম, এফআইসিসিআই-এর ডিরেক্টর ও মারুবেনি কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক মানাবু সুগাওয়ারা, এবং জেটিআই-এর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর এবং জেসিআইএডি-র সদস্য গিন্টৌতাস দিরগেলা।
প্যানেল জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে এফডিআই, শিল্প উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে চলমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেছে।
এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘এই সেমিনারটি যুগান্তকারী ঘটনা যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব বৃহত্তর সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা একটি শক্তিশালী ও সুদূর প্রসারী অর্থনৈতিক সহযোগিতা মডেল তৈরি করতে পারি যা জাপান ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই কল্যাণকর হবে।’
জেসিআইএডি’র প্রেসিডেন্ট আতসুশি হিরাকুরু বলেন, ‘এই সেমিনারটি জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি উলে¬খযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।’
সেমিনারটি জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বেসরকারী খাত, সরকারী কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ প্রধান স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সংলাপ উৎসাহিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে।
অনুষ্ঠানে এফআইসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ, সদস্য কোম্পানিগুলোর সিইওবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।