বাসস
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫৯
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২২

ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগ দূত হওয়ার আহ্বান বিডা চেয়ারম্যানের

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন : ছবি সংগৃহীত

ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগ দূত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ শিল্প কারখানার অব্যবহৃত জায়গাগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

এসব জায়গাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধাগুলো বিদ্যমান থাকায় কারখানাগুলো দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মত দু’একটি খাত বাদে অনেক ব্যবসা থেকেই সরকার বেরিয়ে আসতে চায়।

কোনো কোনো ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসবে তা আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্পষ্ট করা হবে বলেও জানান তিনি।

আজ বুধবার রাজধানীর পুরান পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও চ্যালেন্স’ র্শীষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এফসিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, এফবিসিআই’র প্রশাসক হাফিজুর রহমান, লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. আবুল কাশেম খান এবং বিডার হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগের জন্য গ্যাস বিদ্যুৎ অত্যাবশ্যক।  মালয়েশিয়ায় শিল্পে ৭০ শতাংশ নিশ্চিত করা হয়। এই ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। সেটা বরাদ্দের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করেন। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে। 

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশে এফডিআই আনার জন্য যে যেখানেই কথা বলবেন; তিনি যেন বাংলাদেশের পজিটিভ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। নেগেটিভ বিষয়গুলো সামনে আসলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। 

তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অনেকগুলো এজেন্সি কাজ করছে। সেগুলোকে একত্রিত করে একটা এজেন্সি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা এক স্থান থেকেই সব সেবা পেতে পারেন। এ জন্য  আমরা বিনিয়োগ হিটম্যাপ তৈরি করছি। আমরা কাস্টমার রিলেশন ম্যানেজার নিয়োগ করার চেষ্টা করছি। তারা বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে ঘুরে কাজগুলো করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাস্টমারদের হাতে তুলে দিবেন। 

এছাড়া এফডিআই বাড়ানোর জন্য আগামী এপ্রিলের ৭ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি বিনিয়োগ সামিট করবে বিডা। সেখানে বিদেশি বড় বড় কোম্পানির সিইওরা উপস্থিত থাকবেন। সামিটে তাদের সঙ্গে দেশের বড় বড় উদ্যোক্তার পাশাপাশি  স্টার্টআপদের জন্য একটা মতবিনিময়ের সুযোগ থাকবে।

ছাত্ররা যে পরিবর্তনটা করেছে তা এক কথায় অসাধারণ। আমরা স্বপ্নেও এটা কল্পনা করতে পারিনি উল্লেখ করে এফসিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, ‘একজন সৎ শাসক আসেন তার কেবিনেট সৎ হয়, তাহলে বাংলাদেশকে আমরা একটা অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পাবো।’ 

তিনি মূলধনী যন্ত্রের আমদানি পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে রফতানির আদেশ নেওয়ার পর কারখানা বন্ধ থাকার কারণে সময় মত রফতানি করা যাচ্ছে না। এরপর গ্যাসের দাম বাড়ায় কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না।

লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের  সম্ভাবনার  ঘাটতি নেই। আর সেটা হলো আমাদের তরুণ কর্মক্ষম জনশক্তি। এই জনশক্তিকে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেই।   

তিনি বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে রোড শো করা হয়েছে। কিন্তু দেশের চলমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই। অথচ এই বিনিয়োগকিারীরাই বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশের পক্ষে কাজ করবে। নীতি ঠিক নেই, আইনশৃঙ্খলা ঠিক নেই, ট্রেড লাইসেন্সের মত কাজগুলো করা সময় সাপেক্ষ। বিদেশে রোড শোয়ের পরিবর্তে বর্তমান বিনিয়োগকারীদের এসব অসুবিধা দূর করতে হবে।

তিনি বাজারের প্রয়োজন নির্ভর জনশক্তি তৈরির তাগিদ দিয়ে বলেন, দেশে লোক আছে কিন্তু কাজের জন্য যে ধরণের লোক প্রয়োজন সেই লোক নেই।

ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. আবুল কাশেম খান বলেন, করের ট্যাক্স রেট ফিক্সড না। বিভিন্ন ধাপে ট্যাক্স থাকার কারণে কারোরই বলা সম্ভব নয় কত ট্যাক্স দিতে হবে। আবার কোন কর কখন কমে বা বাড়ে এটাও বলা কঠিন। এ অবস্থায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব নয়। 

আগে মেধা পাচার  হতো, এখন উদ্যোক্তা পাচার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা বাণিজ্যে বাড়তি ট্যাক্স ও বিনিয়োগের নানা জটিলতার কারণে সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। 

এফবিসিআই’র প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে দস্যুরা নিয়ে যায়। দোকান দিলে চাঁদাবাজরা নিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। দেশে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে ট্যাক্স হ্যাভেন না হলেও একটু সুবিধা  দিতে হবে। যাতে ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু পুঁজি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।