শিরোনাম
চট্টগ্রাম, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): নগরীর ২০ পয়েন্টে প্রতিদিন ন্যায্যমূল্যে উম্মুক্ত পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
মসুর ডাল, চিনি, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর- এই পাঁচটি পণ্য কিনতে পারছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য পেয়ে দারুণ খুশি নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর বহদ্দারহাট সংলগ্ন খাজারোড মোড়ে দেখা যায় টিসিবি’র ট্রাকের পেছনে মানুষের লম্বা সারি। কোলের সন্তান নিয়ে নারী, মধ্যবয়সী পুরুষ থেকে বৃদ্ধা, তরুণ-যুবক, সারিতে দাঁড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক মানুষ। সকাল গড়াতেই এসে দাঁড়িয়েছেন লাইনে। টাকা দিয়ে বুঝে নিচ্ছেন টিসিবির ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্য।
লাইনে দাঁড়িয়ে স্বল্পমূল্যে পণ্য কিনতে পেরে খুশি বহদ্দারহাট সংলগ্ন খড়মপাড়ার বাসিন্দা বদর উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, আগে ভ্যান চালাতাম। এখন হাঁপানির জন্য তেমন কাজ করতে পারিনা। এ অবস্থায় অল্প টাকায় পণ্য কিনলাম। খুবই উপকার হলো।
অপর ক্রেতা মধ্যবয়সী নারী আয়েশা বিবি এসেছেন ফরিদারপাড়া তালতলা থেকে। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বুঝে নিয়েছেন পণ্য। তিনি বলেন, আগে ফ্যামিলি কার্ড দেখে মাল (পণ্য) বিক্রি করতো। এখন সবার জন্য ওপেন করে দিয়েছে, এ জন্য ভিড় বেশি। অন্তত কিছু কমদামে পণ্য পেলাম, এতে আমি খুবই খুশি।
টিসিবির চট্টগ্রাম অফিস প্রধান (যুগ্ম-পরিচালক) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের ২০ পয়েন্টে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয় বিক্রি কার্যক্রম। সেই হিসেবে ১ মাস ৯ দিন পর গত সোমবার থেকে আবারও পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। নগরীর ২০টি পয়েন্টে প্রতিদিন ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাক থেকে ২০০ জন করে মোট ৪ হাজার নিম্ন আয়ের পরিবার পণ্য কিনতে পারবেন।
তিনি জানান, একজন ভোক্তা টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল, ৭০ টাকা দরে ১ কেজি চিনি, প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি ছোলা এবং ৭৭ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে ৫০০ গ্রাম খেজুর পাওয়া যাবে। মোট ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে সম্পূর্ণ প্যাকেজ।
টিসিবি সুত্র জানায় আজ বুধবার নগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়নগর, ৪নং ওয়ার্ডের বাহির সিগন্যাল, ৬নং ওয়ার্ডের খাজারোড মোড়, ৭নং ওয়ার্ডের হামজারবাগ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাদপুর, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মাদরাসা মোড়, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীর দীঘি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সরাইপাড়া, ১৩নং ওয়ার্ডের রেলওয়ে স্কুলের সামনে, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জামালখান প্রেসক্লাবের মোড়, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোডাউন বাজার, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটপুল, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন মাঝিরঘাট, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের লালদীঘির পাড়, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াকুব নগর, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম ইপিজেড, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের স্টিলমিল বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়া পয়েন্টে পাঁচ ধরণের পণ্য বিক্রি করেছে।
মানুষ খুবই উৎসাহ নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন জানিয়ে টিসিবির যুগ্ন-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পণ্য আমরা ট্রাকে দিচ্ছি, লাইনে দাঁড়ানো সবাই পাচ্ছে। আমাদের কাছে পণ্যের মজুতও পর্যাপ্ত আছে। শবে কদর পর্যন্ত আমরা এ নিয়মে পণ্য বিক্রি করবো। সামনে পণ্যের তালিকায় চালও যুক্ত হবে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন নগরীর ২০টি পয়েন্ট ধরে সপ্তাহের ছয়দিন মোট ১২০টি পয়েন্টে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে। এ হিসেবে প্রতিটি পয়েন্টে টিসিবি সপ্তাহে একবার করে পণ্য বিক্রি করছে। শুরুর দিকে কোথাও কোথাও ভিড় বেশি হলেও সপ্তাহখানেক পর সেটা কমে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।