শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করেছে।
আজ বৃৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিবৃতিতে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এ কথা জানিয়েছে।
মুদ্রানীতি সংস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন, যা ব্যাংকের সম্পদের বণ্টনগত পর্যালোচনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আইন বহির্ভূতভাবে সরিয়ে নেওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের কাজ করবে। এই উদ্যোগগুলো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কারের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। তবে এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করলে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হতে পারে মন্তব্য করেছে বিল্ড।
বিবৃতিতে বিল্ড জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতির মাধ্যমে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তার প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি হ্রাস করা, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের (এনপিএল) বৃদ্ধির প্রবণতা মোকাবিলা করা। এর মাধ্যমে মূলত অর্থবাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা এই মুদ্রানীতির ভালো দিক।
২০২৪ ও ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে বলে এমপিএসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ২০২৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতির মাধ্যমে কীভাবে এই সুবিধা কাজে লাগানো হবে সে বিষয়ে নীতিগত নির্দেশনা স্পষ্ট করেনি।
সম্প্রসারিত রাজস্ব নীতি ও সংকোচিত মুদ্রানীতির প্রয়োগ সত্ত্বেও, মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০শতাংশ এর ওপরে রয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি কিছুটা কমেছে, যা প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কারণে ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীদিনে মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮শতাংশ এর মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিল্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্প্লাই চেইন ম্যানেজম্যান্ট সুশৃঙ্খল না থাকা, মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজির আধিপত্য, ব্যপক ইনফরমাল অর্থনীতির উপস্থিতি, রাজনৈতিক খাতে কনফিডেন্সের অভাব মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আসার পেছনে কাজ করছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের বাজার মাত্র ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে অলিগোপলি বাজার কাঠামো তৈরি হয়েছে। উচ্চ সুদের হার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ৪২ শতাংশ হচ্ছে ইনফরমাল (অর্থনৈতিক জরিপ ২০২৪)। অন্যদিকে সম্প্রতি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কনীতিতে পরিবর্তন এসেছে যা মূল্যস্ফীতির একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এনবিআর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা সুপারিশ করেছে বিল্ড।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদ হার ১০শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যেখানে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে, যার ফলে নীতিগত সুদের হার পরিসীমা +-১৫০ বেসিস পয়েন্ট নির্ধারিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সুদ হার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ সুদ হার নির্ধারণে নীতিগত নির্দেশনা দিচ্ছে, যেখানে স্প্রেড রেট প্রায় ৬ শতাংশ । অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এই স্প্রেড ধাপে-ধাপে কমানোর সুপারিশ করেছে বিল্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পরিচালনার জন্য ‘ক্রলিং পেগ’ বিনিময় হার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং আন্তঃব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ বন্ধ রেখেছে, যাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি বাড়ানো যায়। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য স্থিতিশীল বিনিময় হার বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ আন্তঃব্যাংক বাজারের নির্ধারিত হার অন্যান্য বাজারমূল্যের তুলনায় কম। বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের জন্য ছয়টি ভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করছে। নির্দিষ্ট মুদ্রাভিত্তিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহজেই চাহিদা ও সরবরাহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে মনে করে বিল্ড।
এছাড়া, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি (৭ দশমিক ৩ শতাংশ) নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) নিচে রয়েছে। শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ থাকলেও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-অক্টোবর) তা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ এ নেমে এসেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির প্রবণতা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে (নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত), যা বিনিয়োগের ধীরগতির ইঙ্গিত দেয়। কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিল্ড।