শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিশেষজ্ঞরা তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ বর্ধিত জিএসপি+ সুবিধা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তারা রপ্তানিকারকদের সহায়তা প্রদানের জন্য ডাব্লিওটিও বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রপ্তানি সহায়তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নগরীর ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটোরিয়ামে "বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রপ্তানি বৈচিত্র্য অর্জনের জন্য কৌশলগত নীতি পুনর্বিন্যাস" শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আজ তারা এই আহ্বান জানান।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) "অর্থনীতি পুনঃকৌশলীকরণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ" বিষয়ক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী ও সারিনা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এর সভাপতি জাভেদ আখতার, পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমৃতা ইসলাম এবং টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বিশিষ্ট আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থনীতি পুনঃকৌশলীকরণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ড. কেএএস মুরশিদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এবং অর্থনীতি পুনঃকৌশলীকরণ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য ড. সেলিম রায়হান এবং ড. মোহাম্মদ এ রাজ্জাক মূল বক্তব্য রাখেন।
শেখ বশির উদ্দিন বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাত ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিষয়টি তুলে ধরেন, যা সামষ্টিক অর্থনীতির উপর উলে¬খযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি দেশের রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্যকরণ এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য দক্ষ কর্মী বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “অতীতে দেশের সমগ্র অর্থনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ও অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি করেছে। ব্যাংকিং খাত ও বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ন্যায্য মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, শ্রম উৎপাদনশীলতা উন্নত করা এবং সরবরাহ দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
তিনি আরও বলেন, এখন শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের উৎপাদন খরচ হ্রাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ভ্যাট ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক শুল্ক নয়, বরং বেসরকারি খাতের বৃহৎ আকারের ব্যবসা থেকে রাজস্ব আসা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমদানি উদারীকরণ ছাড়া, রপ্তানি প্রণোদনা রপ্তানিকে একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে নিয়ে যাবে না।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিঙ্গাপুর ও হাইতির ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া আমদানি উদারীকরণের দুটি ভিন্নধর্মী উদাহরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, "সিঙ্গাপুরের শক্তিশালী রপ্তানি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা রয়েছে যা উদার আমদানি নীতিকে তার অর্থনীতির জন্য কল্যাণজনক করে তোলে। অন্যদিকে, হাইতি বিপরীত পরিস্থিতির নজির।"
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব সংগ্রহ, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উলে¬খযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। এই দুর্বলতাগুলি দূর না করলে আমদানি উদারীকরণ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে শিল্প ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে রপ্তানি ও শিল্প বৈচিত্র্যের তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমটি হল পোশাক খাত। পোশাক রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়টি হল শ্রম প্রণোদনা ছাড়া তৈরি পোশাক খাত। তৃতীয় পথ হল জটিল দক্ষতা প্রণোদনা ভিত্তিক রপ্তানিতে অগ্রসর হওয়া।"
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এর চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত বিশ্ব বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুবিধা পেয়েছে, কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এটি আর পাওয়া যাবে না।
তিনি ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের পরেও এই সুবিধা বজায় রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আলোচনার জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
তিনি দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ব্যর্থতার কথাও উলে¬খ করে জাপানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সামষ্টিক অর্থনীতির উপর চাপ কমাতে, ড. রাজ্জাক রপ্তানি ও রেমিট্যান্স নির্ভরতা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “বর্তমানে সরকারের ৩০-৪০ শতাংশ প্রণোদনা স্থানীয় বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলিতে যাচ্ছে। তাছাড়া, আমদানির উপর আরোপিত উচ্চ শুল্ক থেকে ৩০ শতাংশ রাজস্ব আসে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৭৫ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধার উপর নির্ভরশীল, যা এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আর পাওয়া যাবে না।
ড. রাজ্জাক উল্লেখ করেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানির জন্য ভর্তুকি দেয়া সম্ভব হবে না।
তিনি জাপানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যা বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতির গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারে।
তিনি আলোচনা, নীতি সমন্বয় ও সক্ষমতা উন্নত করার জন্য একটি ‘প্রধান বাণিজ্য আলোচক অফিস’ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।