বাসস
  ০৭ মার্চ ২০২৫, ২১:৩২

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বিতরণ বাড়ছে

ঢাকা, ৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে রেমিটেন্স বিতরণের পরিমান ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২১.১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১,৭৩,৩৯০.৭২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ ছিল ১৪৩,১১৩.২৮ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেড়ে ১৬৫,৬৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে, এজেন্টদের দ্বারা সংগৃহীত এবং বিতরণ করা অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের পরিমাণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৪.৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাসসের সাথে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের এই বৃদ্ধি সরকারের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের উপর ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগের একটি ইতিবাচক ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত 'আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি' এই প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে ব্যাংকগুলির আর্থিক সক্ষমতার প্রচারণা রেমিট্যান্স প্রবাহের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এজেন্টরা এই ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অবদান রাখছেন, কারণ গ্রাহকরা সম্ভবত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তাদের ব্যাংকিং পরিষেবা পাচ্ছেন। একারণেই এজেন্ট ব্যাংকিং অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বিতরণের জন্য জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রামীণ এলাকায় খোলা এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টগুলি সবসময় রেমিট্যান্সের প্রধান গ্রাহক ছিল। একারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের বিতরণ করা রেমিটেন্সের মোট ৯০.১২ শতাংশই পেয়েছেন তারা। আর শহরাঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। সে হিসেবে শহরাঞ্চলের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৭,৭৩১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের ৯৫.৭৫ শতাংশই শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের। ৯২,৩০০.১১ কোটি টাকা নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি যা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের ৫৩.২৩ শতাংশ। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংক বিতরণ করেছে ২৬.৯২ শতাংশ। যেখানে ব্যাংক এশিয়া ৭.৯৮ শতাংশ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৪.৪৩ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংক ৩.১৯ শতাংশ বিতরণ করেছে।

এবিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদাই প্রমাণ করে যে, গ্রামীণ এলাকায় ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, একটি নিরাপদ বিকল্প ডেলিভারি চ্যানেল প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এ পরিষেবা চালু করে। এই পরিষেবার লক্ষ্য সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী যারা সাধারণত ভৌগোলিকভাবে এমন দূরবর্তী স্থানে বাস করেন, যেখানে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের কাছে পৌঁছানো কঠিন। এ পরিষেবার মাধ্যমে  গ্রাহকরা আমানত, ঋণ, বিদেশী এবং স্থানীয় রেমিট্যান্স, পেমেন্ট পরিষেবা (যেমন ইউটিলিটি বিল, কর) এবং এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে সরকারি সামাজিক সুরক্ষা-নেট সুবিধা গ্রহণসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন।