বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০:০৫

অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধি শক্তিশালী রাজস্ব বাফারের মূল চাবিকাঠি: বিশ্বব্যাংক

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): বিশ্বব্যাংক দ্বিবার্ষিক আঞ্চলিক প্রতিবেদনে বলেছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভঙ্গুর রাজস্ব অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবেলায় স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে।

আজ প্রকাশিত ট্যাক্সিং টাইমস শীর্ষক সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন আপডেট- এ বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসবে যা অক্টোবরের জন্য দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৪ শতাংশ কম। ২০২৬ সালে তা ৬.১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। 

সীমাবদ্ধ আর্থিক পরিস্থিতি সহ অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার পাশাপাশি অনিশ্চিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে উচ্চ ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনা করে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশেই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা হ্রাস পেয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেছেন, "গত দশকে একাধিক ধাক্কা সামলাতে গিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক পরিবেশ মোকাবেলা করার জন্য সীমিত বাফারে পরিণত হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই অঞ্চলের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন। এখন বাণিজ্য উন্মুক্ত করা, কৃষি খাত আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতের গতিশীলতা বৃদ্ধি করার সঠিক সময়।" 

অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার একটি মূল উপাদান হবে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ সমন্বয় করা। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় করের হার প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড়ের উপরে থাকে, তবে বেশিরভাগ দেশে কর আহরণ কম।

২০১৯-২৩ সালে গড়ে, দক্ষিণ এশিয়ায় সরকারি রাজস্ব আহরণ ছিল মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ যা অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির জিডিপির ২৪ শতাংশের চেয়ে কম। বিশেষ করে ভোগ করের ক্ষেত্রে রাজস্ব ঘাটতি স্পষ্ট, তবে কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে তা উলে¬খযোগ্য।

বিদ্যমান করের হারের উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ এশিয়ায় কর আহরণ সম্ভাব্যতার ১ থেকে ৭ শতাংশ কম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এই ঘাটতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে ব্যাপক ভিত্তিক অপ্রচলিত ধারা ও বৃহৎ কৃষি খাত এর কারণ। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়ার পরেও, উলে¬খযোগ্য করের ব্যবধান রয়ে গেছে, যা উন্নত কর নীতি ও প্রশাসনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ বলেন, "কম রাজস্ব আহরণ দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক ভঙ্গুরতার মূলে রয়েছে এবং বিশেষ করে অনিশ্চয়তার সময়ে এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।" 

তিনি আরও বলেন, "দক্ষিণ এশিয়ার করের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, কিন্তু আদায় দুর্বল, যার ফলে যারা কর প্রদান করেন তাদের উপর উচ্চ বোঝা চাপানো হয় এবং সরকারগুলির কাছে মৌলিক পরিষেবা উন্নত করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল থাকে না।" 

প্রতিবেদনে কর আহরণ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নীতিমালার সুপারিশ করা হয়েছে, যেমন ত্রুটি দূর করা, কর কোড সহজিকরণ করা, প্রয়োগ কঠোর করা এবং কর বিধি প্রতিপালন সহজতর করা।

এগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে কর ছাড় কমানো; অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করার জন্য প্রণোদনা কমাতে কর ব্যবস্থার সরলীকরণ ও একীভূত করা; এবং করদাতাদের শনাক্তকরণ ও আদায় সহজতর করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

প্রতিবেদনে দূষণ মোকাবেলায় কর নির্ধারণের সম্ভাবনার কথা উলে¬খ করা হয়েছে, যা বায়ু ও পানি দূষণের উচ্চ মাত্রা মোকাবেলায় সহায়তা ও সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারে।

এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অব্যাহত আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রবৃদ্ধি হার ২৪/২৫ অর্থবছরে ৩.৩ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং ২৫/২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হার ৪.৯ শতাংশ হতে পারে। 

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে মুদ্রা ব্যবস্থা সহজিকরণ ও নিয়ন্ত্রণমূলক সুবিন্যস্তকরণের ফলে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে ভারতে প্রবৃদ্ধি হার ২৪/২৫ সালের ৬.৫ শতাংশের তুলনায় ২৫/২৬ অর্থবছরে ৬.৩ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বহিরাগত চাপ ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে এবং প্রবৃদ্ধি হার ২৪/২৫ সালে ২.৭ শতাংশ এবং ২৫/২৬ সালে ৩.১ শতাংশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

আঞ্চলিক প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মূলত রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২৩/২৪ সালে ৪.২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে, যা মূলত ২২/২৩ সালে ছিল ৫.৮ শতাংশ।  

এতে বলা হয়েছে, সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সাথে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিক রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে এবং কার্ব মার্কেট প্রিমিয়াম সংকুচিত হওয়ার কারণে চলতি হিসাবের ভারসাম্য উন্নত হয়েছে। 

ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির চাপের ফলে, অন্যান্য দেশগুলি মুদ্রানীতি অনুযায়ী হার কমিয়ে আনলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি কঠোর করে চলেছে।

মহামারির কারণে প্রবৃদ্ধিতে কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের পর, এই অঞ্চলের তিনটি দেশ ভুটান, ভারত ও নেপাল এখন তাদের ২০১০-১৯ সালের গড় হারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।

অন্য পাঁচটি দেশ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক চাপ বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠেছে অথবা এর মধ্যে রয়েছে।

পণ্যমূল্য ও মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ধরে নিয়ে, বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল এবং সরকারি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কর হার পরিবর্তন বা মুদ্রার অবমূল্যায়নের মতো অস্থায়ী কারণগুলির প্রভাব হ্রাস পেলে যেসব দেশে বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ (বাংলাদেশ) বা নিম্ন (শ্রীলঙ্কা) মূল্যস্ফীতি রয়েছে, সেখানে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে প্রকৃত জিডিপি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।