বাসস
  ৩০ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩২

পোশাকের ন্যায্য দর আদায়ে উন্নয়ন সহযোগিদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : পোশাক খাত সবুজ শিল্পে রুপান্তরে যে নীতি সহায়তা রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। সবুজ কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানিতে এখনো শুল্ক হার বেশি। পাশাপাশি সবুজ শিল্পায়নের জন্য বড় ব্যয় এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন। অথচ এ ধরনের কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের বাড়তি দর দিচ্ছে না বিদেশি ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা। এসব কারণে পোশাক খাতের সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক নয়। 
রোববার এক সংলাপে এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন উদ্যোক্তারা। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে সবুজ শিল্পে আরও পৃষ্ঠপোশকতা চান তারা। ন্যায্য দর আদায়ে তারা উন্নয়নসহযোগির হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। 
বস্ত্র ও পোশাক খাত সবুজ শিল্পে রুপান্তর বিষয়ক এক কর্মসূচির উদ্ভোধন এবং এ বিষয়ে সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে সহযোগিতা দিয়েছে ঢাকায় সুইডিস দূতাবাস। কর্মসূচির অধীনে আগামীতে সংশ্লিস্টদের নিয়ে আরও সংলাপের আয়োজন করা হবে। রাজধানীর হোটেল ব্র্যাক ইনে অনুষ্ঠিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী। পোশাকের ন্যায্য দর আদায়ে মধ্যস্বত্বভোগী ব্র্যান্ড এবং বায়ারদের এড়িয়ে সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌছানোর পরামর্শ দেন তিনি। ই-কমার্সের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌছানো গেলে রপ্তানিকারক এবং ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবে। কারণ, রপ্তানিকারক এবং ভোক্তা পর্যায়ের মাঝখানে থাকা মধ্যসত্বভোগীদের পকেটে যায় মোট মূল্যের ৮৫ শতাংশ। 
পরিবেশসম্মত উৎপাদন ব্যবস্থায় সরকারের আন্তরিকতার কথা তুলে ধরে সাবের হোসেন জানান, পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে- এ বিবেচনায় ১০ টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। এসব প্রকল্পে ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা শিল্পের সবুজায়নে জন্য কি ধরনের নীতিসহায়তা চান পথ নকশাসহ সে বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর মাধ্যমে আগামী বাজেটে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই চাহিদা জানানো হবে।
সংলাপে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দর নিয়ে সব সময়ই ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন তারা। এখন কাঁচামালের দর বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচের সঙ্গে ক্রেতাদের দরের সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না। তবে এ মুহুর্তে সবচেয়ে সমস্যা জাহাজ ভাড়া। এই ব্যয় ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। শিপিং লাইনগুলোর অতি মুনাফার কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পোশাকের দর বেড়ে যাচ্ছে যার সুবিধা উদ্যোক্তা কিংবা ভোক্তা কেউ পাচ্ছেন না। 
বিকেএমইর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সবুজ শিল্পে রুপান্তরে অতিরিক্ত অন্তত ২০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। অথচ দর বাড়ে না এক সেন্টও । এ বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগি দেশগুলো তাদের প্রভাব খাটাতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে আরও সরব হতে পারে। সরকারের ভূমিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবুজ কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন এবং শোধন কাজে ব্যবহার করা রাসায়নিক আমদানির উপর উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। এটা সবুজায়ন নীতি বিরুদ্ধ। 
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজুলল হক বলেন, সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পোশাকে অন্তত ১ সেন্ট দর বেশি দিতে পারে ব্র্যান্ডগুলো। সুইস সরকারকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত সবুজ তহবিল কঠিন শর্তের আবর্তে। সবুজ কারখানা যারা করছে তারাই কেবল ঋণের জন্য আবেদন করতে পারে।এছাড়া ব্যাংক এবং গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার রীতি থাকায় অন্য কারখানাগুলো সরকারের এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। 
শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থেই পোশাকের ন্যায্য দর নিশ্চিত করা ব্র্যান্ড এবং ক্রেতাদের নৈতিক দায়িত্ব । তিনি বলেন, ইট-পাথরে সবুজ অবকাঠামো খুব বেশি কাজে দেবে না যদি শ্রমিকরা ভালো না থাকে। তাদের নিরাপত্তা, বাসযোগ্য মজুরি, স্বাধীন সংঘের অধিকার থাকতে হবে। 
সংলাপে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকায় সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্রিস্টিন জোহানসন, সাবেক বাণিজ্যসচিব সোহেল আহম্মেদ চৌধুরী, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জম, শ্রমিক নেতা ম›ট্টু ঘোষ প্রমূখ।