শিরোনাম
।। কামাল আতাতুর্ক মিসেল।।
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১ ফ্রেরুয়ারি , ২০২৩ (বাসস): জেলার রাজগঞ্জ বাজার যেখানে কাকডাকা ভোরে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তবে সকালের দিকে ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। খুচরা ও পাইকারি দুই ধরনের ব্যবসাই হয় সেখানে। আর ব্যবসায়ীরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরেই ব্যবসা করছেন, অর্থাৎ পারিবারিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শতবর্ষী রাজগঞ্জ বাজারে ঢুকে যা কিছু কিনতে চাইবেন, তার সবই পাবেন এখানে। মাছ-মাংস, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে আলপিন, লাটিম, খেলনা, জামাকাপড়, প্রসাধনসামগ্রী সবই পাওয়া যায় এ বাজারে। এমনকি দা-বটিও মিলবে। এ বাজারে প্রবেশের জন্য মোট ১০টি গেট রয়েছে। প্রায় এক বর্গকিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা বাজারটিতে প্রায় এক হাজার দোকান রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দশকের পর দশক কুমিল্লা নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। বাজারের মুদি দোকানগুলো এক সারি। ১০ ফুট বাই ৮ ফুট মাপের শ খানেক দোকানে হাঁকডাক দিয়ে চলছে বেচাকেনা। চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, মরিচ, রসুন, গুঁড়া দুধসহ মনিহারি জিনিসপত্র রয়েছে দোকানগুলোতে। এলাহী এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী কবির আহমেদ জানান, তিন প্রজন্ম ধরে রাজগঞ্জেই তাঁরা মুদিদোকান করছেন। তাঁর দাদা হারুন অর রশিদ সাবেক পাকিস্তান আমলে রাজগঞ্জ বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আশির দশকের শুরুতে কবির আহমেদের বাবা হাজী মতিন মিয়া এ ব্যবসায় আসেন। এখন এলাহী এন্টারপ্রাইজের হাল ধরেছেন তিনি নিজে। কবির আহমেদ জানান, প্রায় ষাট বছর ধরে তাঁরা মুদি ব্যবসায়ে আছেন। পাড়া-মহল¬ার দোকানের চেয়ে এখানে দাম কিছুটা কম। তাই রাজগঞ্জ বাজারে ক্রেতার অভাব থাকে না।
রাজগঞ্জ বাজারের এক নম্বর গেটের পাশে ফল ও সবজিপট্টি। গেটের শুরুতেই ফলমূলের দোকান। এরপর থরে থরে সাজানো শাক-সবজির ৩০-৪০টি দোকান, যেখানে সারা দিন চলে কেনা -বেচা । দর হাঁকিয়ে আওয়াজ তোলেন বিক্রেতারা। মৌসুম বদলানোর এ সময়ে শীতকালীন বাহারি সবজি ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে। সবজিপট্টির পাশেই মাছবাজার। কোন মাছ নেই এখানে? পাঙাশ, রুই, তেলাপিয়া, কই, শোল, চিংড়ি, মলাঢেলা সবই যাওয়া যায়। আবার মাছ কেনার পর রাজগঞ্জ বাজারে একদল যুবক রয়েছে যারা মাছ কেটে পরিস্কারের কাজ করেন। তাদের একজন লিটন। বয়স ১৮। বসে আছেন রাজগঞ্জ মাছ বাজারের কোণে। সামনে বটি দা আর কাঠের টুকরো। পাশে তার মতো আরও তিন থেকে চার জন যুবক। সারাদিন তাদের কাজ বসে থাকা আর মাছ ক্রেতারা মাছ নিয়ে আসলে কেটে দেয়া। বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্রেতাদের জিজ্ঞাসা করেন মাছ কাটাবেন কিনা ? সাড়া দিলেন মাছ নিজে বহন করে নিয়ে আসেন কাটার জায়গায়। এরপর সহযোগীরাসহ কাটেন মাছ। তুলে দেন ক্রেতার হাতে। মাছ হাতে দিয়ে নেন নিজের পারিশ্রমিক।
মনির হোসেন নামের এক মাছ ব্যবসায়ী বাসসকে বলেন, আমি অনেকদিন যাবৎ রাজগঞ্জ বাজারে ব্যবসা করি। আমার মাছ দোকানের পাশে চারজন যুবক মাছ কাটেন। এদের প্রত্যকের প্রতিদিনের আয় থেকে আমি টাকা দিয়ে দিই। অনেক দোকানে মাসিক হিসেবেও টাকা দেয়। চার বছর ধরে রাজগঞ্জ বাজারে মাছ কাটেন আলমগীর হোসেন। তিনিও মাছ কেটে মাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা আয় করেন। নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার স্কুল শিক্ষক কামরুল ইসলাম। সকালে রাজগঞ্জ বাজারে এসেছেন। ৫ কেজি কাতল মাছ কিনেছেন। তিনি জানান, মাছ কাটা অনেক ধৈর্যের কাজ। বাসায় মাছ কাটতে ছাই লাগে। বাসায় সব সময় ছাই থাকে না। এছাড়াও কই ও শিং মাছ কাটা অনেক কষ্টসাধ্য। রাজগঞ্জ বাজারের যারা মাছ কাটেন তারা খুব সহজেই যে কোন মাছ খুব কম সময়ে কেটে দেন। এতে কর্মজীবী মানুষের জন্য অনেক উপকার হয়।
মাছপট্টির পরেই দুধের বাজার। দুধওয়ালারা সারি বেঁধে দুধের বড় পাত্র নিয়ে বসে থাকেন ক্রেতার অপেক্ষায়। আপনি শুধু আপনার চাহিদামতো কিনে নেবেন। দুপুর বেলায় গিয়েও ১৫-২০ জন দুধওয়ালার দেখা মিলল। দুধ বিক্রেতা দিদার জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ লিটার দুধ বিক্রি করেন তিনি।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া লাটিমের দোকানের দেখাও মেলে শতবর্ষী রাজগঞ্জ বাজারে । হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, ব্যাট-বলের বিরাট সমাহার প্রতিটি দোকানে। প্রায় হারিয়ে যাওয়া লাটিমের দোকানের দেখাও মিলল সেখানে। লাল-সবুজ-হলুদ রঙের লাটিমের কারবার। রাজগঞ্জ বাজারে নিত্যপণ্যের বাইরে পোশাক-আশাক, জুতা, ঘড়ি, এমনকি দা-বটির ব্যবসাও আছে। মোট কথা, রাজগঞ্জ বাজারে গেলে আপনাকে খালি হাতে ফিরতে হবে না।
রাজগঞ্জ বাজারের বিষয়ে কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সানাউল হক বাসসকে বলেন, এ বাজারে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সব মিলবে। বাজারের লিস্ট নিয়ে যাবেন, খালি হাতে ফিরতে হবে না। তিনি জানান, রাজগঞ্জ বাজারে দৈনিক চার-পাঁচ কোটি টাকার পণ্য বেচাকেনা হয়।